ভুল চিকিৎসায় স্থপতি রাজীব আহমেদের মৃত্যুর অভিযোগ

রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকের দেয়া ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় স্থপতি রাজীব আহমেদের মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী স্থপতি সারওয়ার ইকবাল (তেষা)। বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসায় অবহেলার এ অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, স্থপতি রাজীব আহমেদ বুয়েট ২০০৩ ব্যাচের সদস্য ও রুফলাইনারস স্টুডিও অব আর্কিটেকচারের অন্যতম প্রধান স্থপতি। তিনি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৩৮ বছর। 

সংবাদ সম্মেলনে রাজীব আহমেদের চিকিৎসার বিস্তারিত তুলে ধরেন রেডিওলোজি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. আরিফ উদ্দিন। একই সঙ্গে কোথায়-কোথায় ভুল হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের অবহেলার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন তিনি।

চিকিৎসার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে দেওয়া প্রাত্যাহিক রিপোর্টগুলোতে দেখা যায় রাজীবের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ‘Fulminant hepatic failure? (Drug Induced), Hepatic encephalopathy leading to septacemia, septic shock, Acute kidney injury, DIC, ARDS’ তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। কিন্তু বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী একই সময়ে সেবন করা ২টা মেডিসিন ‘Methotrexate’ ও ‘Acitretin’-এর মিথস্ক্রিয়া (Drug interaction) তার এই Fulminant liver failure-এর মূল কারণ। যা সব স্বীকৃত ওষুধ সংস্থার গাইডলাইনে সুস্পষ্টভাবে contraindicated বলা আছে।

স্থপতি রাজীবের চিকিৎসার বিস্তারিত তুলে ধরে বলা হয়, গত দেড় বছর ধরে রাজীব রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নতুন ওষুধ সেবন শুরুর ৯ দিনের মাথায় প্রচণ্ড পেটব্যথা নিয়ে রাজীবকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। সেখানে রাজীবের অবস্থা খুব খারাপের দিকে যাওয়ায় এবং চিকিৎসকের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না পাওয়ার একদিন পর তাকে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। প্রথম যে বেসরকারি হাসপাতালে স্থপতি রাজীবকে ভর্তি করা হয়েছিল সেখানে তার শিরাপথে ২টি অ্যান্টিবায়োটিক এবং পরের হাসপাতালে ৮টি অ্যান্টিবায়োটিকসহ সর্বমোট ১০টি অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। যার বহুবিধ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ৪টি অ্যান্টিবায়োটিক কিডনি সংশ্লিষ্ট বিষক্রিয়াও রাজীব আহমেদের অকাল মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন অব্যবস্থাপনা এবং কালক্ষেপণের অভিযোগ করা হয়।

স্থপতি রাজীবের স্ত্রী স্থপতি তেষার লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করেন, হাসপাতালে রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ার পরও কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পরিদর্শনে আসেননি বা কোনো সুনির্দিষ্ট ডায়াগনসিস না করে কালক্ষেপণ করা হয়। ডাক্তারদের জিজ্ঞাসা করা হলে বলা হয়, ‘ব্যথা ও লিভার এনজাইমের মান বাড়তে বাড়তে এক সময় কমা শুরু করবে এবংধৈর্য ধরে বিশ্রাম নিলে সুস্থ হয়ে যাবে’। অথচ রাজীব তখন লিভার ব্যর্থতার থেকে একে একে অন্যান্য অঙ্গ ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

চিকিৎসকরা রাজীবকে আইসিইউতে নেয়ার আগে তার সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে কোনো আভাসই দেননি। আইসিইউতে নেয়ার পর রাজীবকে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সের বিশেষজ্ঞরা ‘নট ফিট টু ফ্লাই’ ঘোষণা করে। আর এই কালক্ষেপণ, সঠিক ও সময়োচিত ব্রিফিংয়ের অভাব রাজীবকে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্নে নিয়ে যায়’।

লিখিত বক্তব্যে রাজীবের স্ত্রী এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন এবং আর কেউ যেন এমন ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার শিকার না হন সে দাবিতে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে অভিযোগ দাখিল করেন। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট এই অভিযোগের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে।