প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিতে সাংবাদিক আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্টাফরা ভয়ে অফিসের আশেপাশে থেকে কাজ করছেন। একই সাথে আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা অসহায় শিশু এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের লালন-পালনের বিষয়ে উদ্বেগের কথাও শোনা গেছে।
রোববার (৫ মে) সকালে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের মিরপুর শাখায় গিয়ে এসব বিষয় জানা যায়।
রোববার সকালে মিরপুরের দক্ষিণ পাইকপাড়ার আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা কোনভাবেই সংবাদ কর্মী কিংবা অন্য কোন পরিচয়ের কোন ব্যক্তিকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মাঝে। কেউ কোন কথাও বলতে চাচ্ছেন না। শুধু বলছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভিতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
অফিসের স্টাফরা ভয়ে অফিসের আশেপাশে থেকে কাজ করছেন। প্রশাসনের কাজে সহযোগিতা করছেন। সাংবাদিকদের ভয়ে আশ্রয়ে থাকা নিবাসীদের চিকিৎসা ও পরিচর্যার জন্যে ডাক্তার ও নার্সরাও আসতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানান সেখানকার এক কর্মী।
মোহাম্মদ রাসেল নামের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের এক কর্মী জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাহিরের কাউকে আশ্রয়ের ভিতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই কাউকেই ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।
রাসেল জানান, অফিসের স্টাফরা সবাই খুব বেশি অফিসে আসেন না। কিছুটা ভয় কাজ করছে। তারা অফিসের আশেপাশে থেকে কাজ করেন। প্রশাসনের কোন প্রয়োজন হলে তাদের সহযোগিতা করেন।
আশ্রয় কেন্দ্রে কাজ করা সুফলা নামের এক নারী কর্মী জানান, চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার স্ত্রী এখন এখন প্রতিষ্ঠানটি দেখাশুনা করছেন। তিনি প্রায় প্রতিদিন এখানে আসেন।
সুফলা জানান, আশ্রয়ে থাকা নিবাসীদের জন্যে খাদ্যের যতটুকু মজুদ ছিল তা দিয়েই চালিয়ে নিচ্ছি। ওষুধ ও শিশুদের খাদ্য সামগ্রী আগের গুলো দিয়েই চলছে৷ নতুন করে কেনা হয়নি।
সুফলা জানান, আশ্রয়ে থাকা নিবাসীদের চিকিৎসা ও পরিচর্যার জন্যে ডাক্তার ও নার্সরা আসতে চায় না। তারা সাংবাদিকদের ভয় পান। সাংবাদিকরা কে কি প্রশ্ন করেন আর তারা কি না কি উত্তর দিয়ে ঝামেলায় পড়ে যান সে ভয়ে আসতে চান না। সে কারণে, এখানে ড্রেসিংয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাংবাদিকদের কারণে স্টাফরাও আসতে চায় না। কথা বলতে চায় না৷ ভয় পায়।
সুফলা জানান, মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তারের পর ব্যাংকের টাকা লেনদেনে যাতে কোন সমস্যা না হয় এবং আশ্রয়ে থাকা নিবাসীরা যাতে ভালো থাকেন সে বিষয়ে প্রশাসন সহযোগিতা করছেন।
সুলফা বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের কোন ভুল ত্রুটি কিংবা কোন দোষ থাকলে তার সুরহা হোক। কিন্তু আশ্রয়ে থাকা নিবাসীরা যেন খাদ্য, চিকিৎসার কষ্টে না পড়েন, সেটি যেন দেখা হয়।
তিনি বলেন, আমি অনেকদিন হলো এখানে কাজ করি। সাংবাদিকরা কার কাছ থেকে তথ্য নিয়ে লিখছেন, জানি না। যে সব অভিযোগ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে তার ভিত্তি নেই। এখানকার নিবাসীদের সাথে কথা বলা উচিত। সেই সাথে প্রতিষ্ঠানটি মিল্টন সমাদ্দারের হাতে রাখার কথাও জানান সুফলা।
চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারে বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানটি যাতে ভালোভাবে চালু থাকে সে বিষয়ে আদালত একটি নির্দেশনা দিতে পারে। প্রয়োজনে সমাজসেবা অধিদপ্তর এখানে প্রশাসকও নিয়োগ দিতে পারে৷ তিনি বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা নিবাসীদের যাতে খাদ্য ও চিকিৎসায় কোন ধরণের সংকট না হয় সে বিষয়টি প্রশাসনের খেয়াল রাখা দরকার।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ারের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মৃত্যু সনদ জালিয়াতি ও টর্চার সেলে মানুষকে নির্যাতনসহ নানা অভিযোগ এনে একটি সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় বর্তমানে মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমাণ্ডে রয়েছেন।
২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার প্রতিষ্ঠা করেন মিল্টন সমাদ্দার। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির আশ্রয়ে ১৭০ জনের মতো শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আছেন। প্রতিষ্ঠানটি স্টাফ রয়েছেন ১০০ জন।