বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেন সিনেমা বানিয়েছিলেন ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’। ছবিতে মানুষের দারিদ্র্যতা নিপুন হাতে চিত্রিত হয়েছিল। তারই আলোকে ঢাকার যানজট কমাতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে গোলাপি বাস সার্ভিসের। কিন্তু অঙ্কুরেই সেখানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। এই বাস বন্ধের জন্য চলছে নানাবিধ ষড়যন্ত্র। যা প্রকারন্তে সরকারের এই সদিচ্ছাকে চ্যালেঞ্জ করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন।
গত তিন দিনের মতো বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন রুটে বাস অনেকটাই কম ছিল। রাস্তায় বিভিন্ন দলের দাবি দাওয়ার মিছিলে যেমন সড়কে বাস নামেনি তেমনি নতুন পরিবহন গোলাপি রঙয়ের বাস নামানোকে কেন্দ্র করে অনেকটাই পরিবহন মালিক শ্রমিকদের ভিতরে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। তাই মিলছে না বাস বিশেষ করে কুড়িল, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর, শেওড়া ও বনানী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখা গেছে শত শত যাত্রী যানবাহনের অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। যার রেশ ছড়িয়েছে গাবতলী মোহাম্মদপুর এমনকি গুলিস্তান মতিঝিল সড়কে। যদিও এখন পর্যন্ত গোলাপি রঙয়ের কোন গাড়ি এই সব রুটে নামানো হয়নি।
যারা এতদিন চুক্তিতে বাস চালিয়ে আসছে তারা কোনভাবেই ঢাকার রাস্তায় চলাচলের জন্য কাউন্টার সার্ভিস মেনে নিতে পারছেন না। যাত্রী ঠকিয়ে যারা নিজেদের পকেট ভরেছেন তারা এবার যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এই কাউন্টার সার্ভিসের বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তারা কাউন্টারভিত্তিক বাস চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যাদের পক্ষে মৌন সম্মতি রয়েছে বাস মালিকদের।
এদিকে ঢাকার কয়েকটি পরিবহন কোম্পানির চালকরা তাদের অনিচ্ছার বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছে। তাদের গাড়ি চালানো বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো যাত্রী।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বলছে, তুরাগ, অনাবিল ও এয়ারপোর্ট পরিবহনের চালকরা কাউন্টারভিত্তিক বাস চালাতে চাইছেন না, সে কারণে এই সংকট তৈরি হয়েছে। তাদের বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে, দুয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি ‘ঠিক হয়ে যাবে’ বলে তারা মনে করছেন।
ঢাকার খিলক্ষেত নামাপাড়ার বাসিন্দা শুভ আলম বলেন, খুবই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী পরিবহনগুলো হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাইদা, অনাবিল এবং তুরাগের কোনো বাস সড়কে নেই। ফলে শত শত মানুষের সঙ্গে আমিও ভোগান্তিতে পড়েছি। এদিকে সড়কে দেখা গেছে যাত্রীদের বেহাল অবস্থা। বাড্ডা-রামপুরা হয়ে যারা যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া বা ওইদিকে যেতে চান তাদের কষ্টের কোন সীমা পরিসীমা নেই। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফুল আলম এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাজধানীতে বাস সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, কয়েকটি পরিবহনের চালকরা কাউন্টারে বাস চালাতে চাচ্ছেন না। এতে কয়েকটি সড়কে বাস কম চলছে। শুরুতে আপত্তি জানালেও ইকবাল, বলাকা পরিবহনের বাস চলাচল শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, চুক্তিতে গাড়ি চালিয়ে বেশি লাভ করত এমন চালকরা এই বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। বলাকার গাড়ি চলছে, রাইদার কিছু গাড়িও চলাচল শুরু করেছে। চালকদের মধ্যে দুইটা গ্রুপ আছে তাদের ডাকছি ওইটা ঠিক করে দিবো। বিমানবন্দর পরিবহন গত মঙ্গলবার লোকাল করেছিল। মালিকদের পরে প্রেশার দেওয়া হইছে যেন কাউন্টারে চালায়। এটা ঠিক হইতে দুয়েকটা দিন লাগবে আরও।
সাইফুল আলম বলেন, পয়সাকড়ি অন্যায়ভাবে ইনকাম করে যদি অভ্যাস হয়ে যায়, তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। তারা এখন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গাড়ি চালাত, মালিককে ২ হাজার টাকা জমা দেয়। তারা ইনকাম করত ৫-৬ হাজার টাকা। এখন ন্যায্য বেতন নিলে হয়ত ২ হাজার পাবে। এই একটা বিষয় আছে। আমরা তাদের বোঝাচ্ছি, লাগলে বেতন আরও বাড়িয়ে দেব। পাশাপাশি তাদের ইন্ধনও দিচ্ছে কেউ কেউ। ঢাকার আব্দুল্লাহপুর হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে গাজীপুরের যেসব বাস চলে, সেগুলোর কাউন্টার পদ্ধতির পরিষেবা শুরু হয় বৃহস্পতিবার।
জানা গেছে, বর্তমানে গোলাপি রঙের এসব বাসের সংখ্যা দুই হাজার ৬১০টি। এতদিন ২১টি কোম্পানির অধীনে চলা এসব বাসে শৃঙ্খলা আনতে চালু করা হয় ই-টিকেট।
এ পরিষেবা উদ্বোধন করে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছিলেন, ঢাকার ভঙ্গুর ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করার প্রথম পদক্ষেপ এটি। পর্যায়ক্রমে সবগুলো রুটে এই ব্যবস্থা চালু করা হবে। এদিকে রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের সব সুন্দর উদ্যোগ অতীতের মতো এবারেও ব্যর্থ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে অভিজ্ঞমহলের অভিমত।
এ বিষয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো.ইয়াসীন এর সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তিনি কোন সাড়া দেন না। তবে পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরীও দায় এড়িয়ে যান। তিনি পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তিনিও এ বিষয়ে সাড়া দেন না।