ডিএসসিসির সিদ্ধান্তে রেস্তোরাঁ মালিকদের প্রতিবাদ

নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ডিএসসিসির এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবাদ জানায় তারা। 

মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি ও মহাসচিব ইমরান হাসান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডিএসসিসি একতরফাভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোনো ধরনের আগাম নোটিশ, আলোচনা বা যৌক্তিক সময়সীমা না দিয়ে হঠাৎ ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বিবেচনাহীন, অমানবিক, ব্যবসাবিরোধী ও দেশবিরোধী।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বহু বছর ধরে আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আমাদের এই সেক্টর অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং পর্যটন শিল্পে বিশাল অবদান রেখেছে। অনেক রেস্তোরাঁ মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

লিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি জানায়, রেস্তোরাঁ মালিকরা জায়গার লিজ ও রিনোভেশনে যে বিনিয়োগ করেছেন, তা পরিশোধের আগেই আমাদের ব্যবসা বন্ধের মুখে পড়েছে যা আমাদের জন্য চরম আর্থিক ক্ষতির কারণ হবে। অথচ ডিএসসিসি এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হাজারো ব্যবসায়ীর পরিবারকে পথে বসানোর আয়োজন করেছে। প্রশাসনের এই বেআইনি ও একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের ফলে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ধ্বংস হবে, কর্মসংস্থানের মারাত্মক সংকট তৈরি হবে এবং রাজধানীর ভোক্তা সেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত অচল হয়ে পড়বে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা আরও বলেছেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, যদি ডিএসসিসি তাদের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে দ্রুত আলোচনায় না বসে, তবে দেশের সব রেস্তোরাঁ মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ, সড়ক অবরোধ ও দেশব্যাপী রেস্তোরাঁ বন্ধের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো। আমরা চাই দ্রুত একটি সমঝোতামূলক নীতিমালার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান। অন্যথায়, সব ধরনের নাগরিক অসন্তোষ ও অস্থিতিশীলতার দায়দায়িত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকেই বহন করতে হবে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে ব্যবসা শুরু করতে হলে ১৪টি সংস্থার অনুমতি লাগে। এতগুলো সনদ নিতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। তারপরেও অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এখন রেস্তোরাঁ ব্যবসায় মনোযোগী হচ্ছেন। তাতে দিন দিন বড় হচ্ছে এ ব্যবসার পরিধি। বছরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশের মতো।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে রেস্তোরাঁ রয়েছে ৪ লাখ ৮১ হাজারের বেশি। এ শিল্পে কর্মরত ৩০ লাখের বেশি শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের রেস্তোরাঁ শিল্পে আয় ৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ২ লাখ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ রয়েছে এখাতে। ভবিষ্যতে দেশের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষকে রেস্তোরাঁর খাবারের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। রেস্তোরাঁ খাত আজ দেশের অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত। কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং লাখো মানুষের জীবিকা সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত।