রাজধানীর ভাটারা কুড়িল প্রগতি সরণি এলাকায় একটি গাড়ির শোরুমে পরিকল্পিত হামলার ঘটনায় শোরুমের কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দোকান ভাড়া সংক্রান্ত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৮ আগস্ট সকালে হ্যালো কারস শোরুমে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। আবারও হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শোরুমের কর্মচারী এবং আশপাশের ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে দায়ের করা মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, গত ২৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কামরুন নাহার ও তার স্বামী এএসএম নোমানের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন বহিরাগত লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শোরুমে ঢুকে কর্মচারীদের একটি রুমের মধ্যে আটকে মারধর করে ও তাদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এসময় শোরুম ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া অন্তত ১৫টি গাড়ি শোরুমের বাইরে নিয়ে ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা শোরুমের সাইনবোর্ডও ভেঙে ফেলে।
এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সময় আশপাশের অন্য গাড়ি শোরুম ও ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাবসায়ীরা একাধিকবার ৯৯৯-এ ফোন করার পর দুপুর ২টার দিকে ভাটারা থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে পুলিশ আসার আগেই হামলাকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
মামলার এজাহারে আরও জানান হয়েছে, ভাড়া সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারী কামরুন নাহার শোরুমের ঘর মালিক হলেও শোরুমের তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার রশিদ আহমেদ জুয়েলের মাধ্যমে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি মাসুদুল আমিন শাহীন হ্যালো কারস শোরুমের জন্য ভাড়া নেন। ভাড়াবাবদ চুক্তি মোতাবেক ১ কোটি টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। সেই হিসেবে হ্যালো কারস এর চুক্তির ঠিকানায় ট্রেড লাইসেন্স, আইআরসি, টিআইএন, বিআইএনসহ সব বৈধ কাগজ পত্র সম্পূর্ণ করে মাসুদুল আমিন শাহীন জাপান থেকে গাড়ি আমদানি করে ব্যবসা পরিচালনা করতে থাকেন। চুক্তিপত্র অনুসারে ২০২১ সালে ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত হ্যালো কারস এর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের কুড়িল শাখায় কামরুন নাহারের ব্যক্তিগত হিসাবে ২৮ মাসের ভাড়া বাবদ মোট ৬০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়। এর পর থেকে কামরুন নাহার ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে তিন লাখ টাকা দাবি করেন। মাসুদুল আমিন শাহীন অস্বীকৃতি জানালে অগ্রিম ১ কোটি টাকা না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে দেওয়া হয় প্রাণ নাশের হুমকি। মালিক পক্ষ হ্যালো কারস এর সঙ্গে এর আগে সম্পাদিত সব চুক্তি অস্বীকার করে। ২০২৩ সালে মে মাসের ভাড়া বাবদ ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রদান করলে তা ফেরত দেয়। এব্যাপারে রেন্ট কোর্টে মামলা দায়ের করে ভাড়া প্রদান করা হয়। দোকান মালিক কামরুন নাহারের অবস্থান পরিবর্তন না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে মাসুদুল আমিন শাহীন ভাটারা থানায় ফৌজদারি মামলা করেন। সেই মামলায় পুলিশ তদন্তে ভাড়া ও অগ্রিম টাকার বিষয়ে সত্যতা পায়। তারপরও ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল কামরুন নাহার ও তার স্বামী এএসএম নোমান হ্যালো কারস শোরুমে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ও প্রাণ নাশের হুমকি দেন। এব্যাপারে ভাটারা থানায় অভিযোগ এবং কোর্টে মামলা মামলা করা হয়। মামলা করায় ক্ষুব্ধ হয়ে চলতি বছরের ২৮ আগস্ট কামরুন নাহার এবং তার স্বামী এএসএম নোমান ৪০-৫০ জন লোক নিয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হ্যালো কারস শোরুমে হামলা করেন। এসময় তারা শোরুমের অর্থ, চেক ও অন্যান্য মূল্যবান কাগজ নিয়ে যায় এবং হামলাকারীরা সিসিটি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। তারা লোহার রড দিয়ে প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী সাকিব, রনি, ইজাজ, মিজানুর ও আঞ্জু মিয়াকে বেধড়ক মারধর করে। হামলার খবরে আশপাশের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পুলিশের উপস্থিতিতে, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো শোরুমে নেওয়া হয়। হামলায় আহতরা রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
পাশের আলাক্সা অটো শোরুমের মালিক ইব্রাহিম খান বলেন, ‘প্রকাশ্যে জনসম্মূখে একটি শোরুমে সন্ত্রাসী হামলা কাম্য হতে পারে না। সেদিন দোকান মালিক বহিরাগত লোকজন নিয়ে হ্যালো কারস শোরুমে হামলা ও ভাঙচুর করার মধ্য দিয়ে আইন হাতে তুলে নিয়েছেন। হামলার সময় আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছেন।
একাধিক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে জানিয়েছেন, এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ব্যবসায়িক পরিবেশ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত করেছে। তারা দ্রুত পুলিশি নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান।
হ্যালো কারস শোরুমের মালিক মুহাম্মদ মাছুদুল আমীন এর পক্ষে মো. মোজাহিদুল ইসলাম আদালতে নোমানসহ অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনের নামে মামলা দায়ের করার পর আদালত মামলাটি এফআইআর করার জন্য ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ কে নির্দেশ দেন।
হ্যালো কারস শোরুমের ব্যবস্থাপক মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দোকান মালিকের কাজ থেকে এমন কার্যক্রম অপত্যাশিত। তিনি দোকান ভাড়ার চুক্তির নিয়ম ভেঙে আমাদের বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছেন। সর্বশেষ গত মাসের ২৮ আগস্ট স্বামী-স্ত্রী মিলে ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেন। এরপরই আমরা আইনের আশ্রয় নেই।’
ভাটারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রাকিবুল হাসান মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে।
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল আমিন বলেন, ‘মামলা তদন্ত চলছে। এর মধ্যে একজন আসামি জামিনে রয়েছে। একজন জেল হাজতে রয়েছেন।
এই মামলায় অভিযুক্ত এএসএম নোমান আলম জেল হাজতে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে অভিযুক্ত কামরুন নাহার এর কাছে হামলা ও মামলা বিষয়ের জানতে চাইলে তিনি তার আইনজীবী খায়রুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
কামরুল নাহারের আইনজীবী খায়রুল হাসান অভিযোগের বিষয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মামলা বিচারাধীন। তবে মামলার বিষয়ে সব কিছু না দেখে বলা যাবে না।