ঢাকায় রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া অবিরাম বৃষ্টি সোমবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালেও থামেনি। ভোরে বজ্রপাতসহ শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাতে মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যেই শহরের প্রধান প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। কোথাও হাঁটুসমান পানি জমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে কর্মদিবসের সকালেই বিপাকে পড়েছেন নগরবাসী, বিশেষ করে অফিসগামী মানুষ।
সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি, কলাবাগান, আসাদগেট, মোহাম্মদপুর, নিউমার্কেট, মগবাজার, মিরপুর ১০ ও শেওড়াপাড়া এলাকাজুড়ে দেখা গেছে পানিবন্দি অবস্থা। আসাদগেট, মগবাজার ও শেওড়াপাড়ায় ছিল কোমরসমান পানি, যেখানে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে। অনেক রাস্তায় দেখা গেছে থেমে থাকা বাস ও রিকশার দীর্ঘ সারি, কিছু জায়গায় মানুষ হেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জমে থাকা পানি।
সকাল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত চলা বৃষ্টিতে ঢাকায় ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ সময় কর্মস্থলে পৌঁছাতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
নাবিলা, যিনি মগবাজার থেকে অফিসে যাচ্ছিলেন তিনি বলেন, বাসা থেকে বের হলেও কোমরসমান পানির কারণে অফিসে যেতে পারিনি। রিকশাও পাওয়া যাচ্ছে না, হাঁটাও যাচ্ছিল না।
নিউমার্কেট থেকে মুকিতুর নামের এক তরুণ বলেন, রাস্তায় এত পানি যে গাড়ি আসছে না। হাঁটা সম্ভব নয়। রিকশায় উঠতে গেলেও ভাড়া চাচ্ছে দ্বিগুণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, অলিগলি ও সংযোগ সড়কে আটকে পড়েছেন মানুষ। অনেকেই পানি মাড়িয়ে অফিসে রওনা হয়েছেন। অনেকে আবার বাসা থেকে বের হওয়ার সাহসই পাননি। বিশেষ করে মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও নিউমার্কেট এলাকায় দীর্ঘ যানজট দেখা গেছে, যা অনেক জায়গায় গাড়ি চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।
আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দিকে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে আরও একটি লঘুচাপের সম্ভাবনা রয়েছে, যা ঘনীভূত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাত্র দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে শহরের অর্ধেক এলাকা অচল হয়ে পড়া ঢাকার দীর্ঘদিনের সমস্যা। ঢাকার অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, খাল-নদী দখল ও জলাধার সংকোচন এই দুর্ভোগের মূল কারণ।
নগরবাসীর অভিযোগ, একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলেও জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে কার্যকর কিছুই হয়নি।