রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু, ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে এসেছে জয় মাহমুদের পরিবারে। নাটোরের বাসিন্দা জয় মাহমুদ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ -তে সিম্যান হিসেবে কাজ করতেন। গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়েছে জাহাজটি। কেএসআরএম কোম্পানির ওই জাহাজে জয় মাহমুদসহ ২৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক এখনও জিম্মি রয়েছেন। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চলছে জোর প্রচেষ্টা।
ছেলের চিন্তায় মুখে হাসি নেই জয় মাহমুদের বাবা জিয়াউর রহমানের। বুধবার (১০ এপ্রিল) জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা হয় খবর সংযোগ ডটকম প্রতিনিধির। কান্নাজড়িত কন্ঠে হতভাগ্য এই পিতা বলেন, "নিজের সন্তান ডাকাতের হাতে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে ঈদের আনন্দ থাকবে! প্রতিটা মুহূর্ত ছেলের জন্য দুঃশ্চিন্তায় থাকি। এখন আমাদের সবকিছুতেই অশান্তি"।
তিনি আরও বলেন, "ছেলে যদি আমার ডাকাতের হাতে না থেকে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় নিরাপদে থাকত, তাহলেও আমরা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হতাম না। ছেলের জন্য দোয়া ছাড়া আর কিছু করার নাই"।
এদিকে একমাত্র ছেলের জন্য কাঁদতে-কাঁদতে শোকে পাথর হয়ে গেছেন জয় মাহমুদের মা আরিফা বেগম। হতভাগ্য এই মা বলেন, "ডাকাতদের কবলে পড়ার পর প্রথম যখন আমার ছেলের সঙ্গে কথা হয় তখন জয় বলেছিল মোবাইলে ইন্টারনেট না থাকায় সামনের ৩-৪ মাস আমার সঙ্গে কথা হবে না। আমি টেনশন করব দেখে সত্যিটা তখন বলেনি। এই খবর পাওয়ার পর থেকে বাড়ি থেকে আনন্দ উঠে গেছে। এখন আল্লাহর উপর ভরসা করে আছি। এর মধ্যে কয়েকবার কথা হয়েছে জয়ের সঙ্গে। তারপর কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি"।
আরিফা বেগম আরও বলেন, "ছেলে বিপদে পড়ে আছে, কিভাবে ঈদের আনন্দ করি। আমরা চাই সরকার দ্রুত আমার ছেলেসহ আরও যারা জাহাজে আটকে আছে তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করুক"।
জয় মাহমুদের বোন সালমা খাতুন বলেন, "আমাদের স্মার্ট ফোন না থাকায়, ভাইয়ের সঙ্গে সবসময় কথা বলতে পারতাম না। চিটাগাং থাকলে মাঝে মধ্যে কল দিয়ে কথা বলত। দেশের বাইরে গেলে তো নেটওয়ার্ক পায়না। ছুটিতে আসলে আমাদের বাড়িতে আসত। ঈদ চলে এলো, ভাই আসলো না। ভাইয়ের সঙ্গে কি আর কথা হবে না আমার। আমার ভাইকে ফিরে পেতে চাই"।
জয় মাহমুদের চাচাতো ভাই মারুফ হোসেন বলেন, "জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর জয় ভাই প্রথমে আমাকে একটি মেসেজ (ক্ষুদে বার্তা) পাঠান। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই আমাদের বাড়িতে আনন্দ নামে জিনিসটা হারিয়ে গেছে। সবাই তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করে। কালকে ঈদের দিন, তবুও বাড়িতে কারো মুখে হাসি নেই। তিনি বলেন যত দ্রুত সম্ভব আমার ভাইকে আমরা ফিরে পেতে চাই"।
পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য মজিবর রহমান বলেন, "জয় মাহমুদের পরিবার অনেক কষ্ট করে তাকে চাকরি নিয়ে দিয়েছিল। জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর থেকে পরিবারটি হতাশাগ্রস্থ হয়ে গেছে। আমরা এলাকাবাসী তাদেরকে সান্ত্বনা দেই যে জয়ের ক্ষতি হবেনা, নিশ্চয়ই সে ফিরে আসবে"।