স্বপ্নেও ভাবিনি জীবিত দেশে ফিরবো: নাবিক জয়

'যখন আমাদেরকে জলদস্যুরা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়, তখন থেকে আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবিনি জীবিত কখনও বাংলাদেশে ফিরবো। এরপর যখন আমাদের ফোন নিয়ে নেয় তখন আরও চিন্তিত হয়ে পড়ি। সবসময় ভাবতাম পরবর্তী ধাপ কি হবে। এরপর ঈদ চলে আসলে নামাজ টুকু শুধু পড়েছি, ঈদের আনন্দ করতে পারিনি।' 

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৫দিন পর বুধবার ভোরে বাড়ি ফিরে দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন, এমভি আবদুল্লাহ নাবিক নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার সালাইনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে জয় মাহমুদ।

জয় মাহমুদ বলেন, এরপর ঈদ চলে আসলে ঈদের নামাজটুকু শুধু পড়েছি, ঈদের আনন্দ করতে পারিনি। এখন ছাড়া পেয়ে সেই ঈদের আনন্দ আল্লাহ যেনো এখন দিয়েছে। আমাদের ফিরিয়ে আনতে সিও স্যারসহ যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

এদিকে পরিবারের একমাত্র ছেলে বাড়ি ফেরায় সকাল থেকে জয় মাহমুদের পরিবারে চলছে উৎসবের আমেজ। সন্তান জয় মাহমুদকে কাছে পেয়ে আনন্দের সীমা নেই যেনো মা আরিফা বেগমের। আদর সোহাগ করে বরণ করে নেন নিজ সন্তানকে। জয় মাহমুদের ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা তাকে একনজর দেখার জন্য তার বাড়িতে ভিড় জমায়।

জয় মাহমুদের চাচাতো ভাই মারুফ হোসন বলেন, বাড়িতে অন্য কারো স্মার্ট ফোন না থাকায় আমার ফোন দিয়েই সব সময় ভাই কথাবার্তা বলতো। জলদস্যদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর থেকে আমাদের বাড়িতে আনন্দ নামের জিনিসটা হাড়িয়ে গেছিল। এখন ভাই ফিরে এসেছে। আমরা অনেক খুশি।

জয় মাহমুদের বাবা জিয়াউর রহমান বলেন, ছেলেদের ডাকাতদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর চিন্তিত হয়ে পড়ি। আল্লাহর রহমতে ছেলে বাড়ি ফিরেছে। সরকার ও জাহাজের মালিকপক্ষের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের চেষ্টায় দ্রুত আমার সন্তান বাড়িতে ফিরেছি।

জয়ের মা আরিফা বেগম বলেন, আমার বুকের ধন আমার বুকে ফিরে এসছে এটাই বড় আনন্দ। এরচেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না। আল্লাহপাক আমার বুকের মানিককে ফিরে দিছে এজন্য তার দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া।

প্রসঙ্গত, কার্গো নিয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজকে জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন সময়ে মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে।

এরপর গত (১৪ এপ্রিল) ভোরে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিক। এরপর জাহাজটি পৌঁছে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে। সেখান থেকে মিনা সাকার নামের আরেকটি বন্দরে চুনা পাথর ভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সব মিলিয়ে ৬৫ দিন পর মুক্ত নাবিকরা বাংলাদেশে এসে স্বজনদের কাছে ফিরলেন।