পিরোজপুর পৌরসভায় নিকাশি ব্যবস্থার নাজুক অবস্থা দিন দিন বেড়েই চলেছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ দিন ধরে ড্রেন ও খাল দখল এবং ময়লা-আবর্জনায় সেগুলোর প্রবাহ বন্ধ থাকায় বৃষ্টির পর পানি জমে থাকছে, যা এডিস মশার আদর্শ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।
সরেজমিনে পিরোজপুর শহরের মাতৃসদন সড়ক, উকিলপাড়া, মধ্য রাস্তা, শিক্ষা অফিস সড়ক, কালিবাড়ি সড়কসহ বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার ড্রেনগুলোতে দেখা যায়, সঠিক সময়ে পরিষ্কার না করা এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় বৃষ্টির পানি ড্রেনগুলোতে জমে থাকছে। এতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এই জমে থাকা পানিই এখন ডেঙ্গু রোগের মারাত্মক বার্তা বহন করছে।
পৌরসভায় প্রায় ৪২টি খাল ও ৬০ কিলোমিটার ড্রেন দখল ও ময়লা-আবর্জনার কারণে কার্যত কোনো নির্ভরযোগ্য নিকাশি ব্যবস্থা নেই। সম্প্রতি 'ভাড়ানি' নামে একটি খাল স্থানীয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে খনন ও দখলমুক্ত করার কাজ শুরু হলেও বাকি খালগুলো এখনো বেদখল। ফলে খালগুলোতে নদীর পানি প্রবেশ বন্ধ হয়ে সেগুলো ছোট ড্রেন বা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে।
দেশের পুরাতন পৌরসভাগুলোর মধ্যে পিরোজপুর অন্যতম হলেও এর নগরায়ন হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। যথাযথ নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রায় ৩০ বর্গকিলোমিটারের এই পৌরসভার ৪২টি খালের মধ্যে অধিকাংশই দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। যত্রতত্র স্থাপনা হওয়ায় একদিকে যেমন পানি চলাচলের স্বাভাবিক গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলস্বরূপ, অল্প বৃষ্টিতেই পৌরসভা এলাকায় সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।
অন্যদিকে, ড্রেনগুলোকে ময়লার ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করায় শহরের অধিকাংশ ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ফলে পৌরসভার খাল ও ড্রেনগুলো পরিণত হয়েছে মশা ও রোগজীবাণুর সূতিকাগারে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাহাত হাওলাদার বলেন, পৌর এলাকার খালগুলো দখল এবং দূষণে আশপাশে যারা আমরা বসবাস করি, তাদের মশা এবং গন্ধে ঘরে থাকার মতো পরিবেশ নেই। যে যার মতো খাল দখল করে দোকান, বাগান এমনকি বসতঘর তৈরি করে ফেলেছে। যার ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে মশা আর গন্ধে থাকা যায় না। খালগুলো এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া ড্রেনগুলোও ঠিকভাবে পরিষ্কার না করায় সেখানেও মশা জন্ম নিচ্ছে।
শেখ জায়েদ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়, তা আবার দিনের পর দিন সরে না। এর মধ্যে মশা-মাছির উপদ্রব ভয়ানক। ময়লা-আবর্জনায় ঠাসা ড্রেনগুলো দীর্ঘ দিন ধরে পরিষ্কার না করায় পানি চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
পিরোজপুর জেলা উন্নয়ন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মো. মাইনুল আহসান মুন্না বলেন, আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে, শহরের ড্রেনগুলো সঠিকভাবে পরিষ্কার না করার কারণে সেখানে পানি জমে থাকে এবং মশার সৃষ্টি হতে পারে। এ বিষয়ে কয়েকবার পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তারা কাজ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। পাশাপাশি আমাদের সবার সচেতন হতে হবে যেন ঘরবাড়ির আশপাশে পানি জমে না থাকে, যেখানে মশা সৃষ্টি হতে পারে। সবাই একত্রে সচেতন হলে আমরা ডেঙ্গুর ব্যাপকতা কমাতে পারব।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) সুরঞ্জিত কুমার সাহা বলেন, এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার ও স্থির পানিতে ডিম পাড়ে। শহরের প্রতিটি জলাবদ্ধ স্থান যেন এখন মশার আদর্শ প্রজনন ক্ষেত্র। এখনই যদি দ্রুত ড্রেন পরিষ্কার ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে শহরে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব কমাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে, বিশেষ করে ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করতে হবে। মূলত ভোরবেলায় এই মশা বেশি কামড়ায়, তাই এই সময় বেশি সতর্ক থাকতে হবে। বাসাবাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।
এ বিষয়ে পিরোজপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ধ্রুব লাল দত্ত বণিক বলেন, আমাদের পৌরসভায় কিছু ড্রেন আছে যেখানে বর্ষা মৌসুমে পানি জমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। যদিও আমাদের পৌরসভায় জনবল সংকট আছে, তবে আমাদের এ বিষয়ে মিটিং হয়েছে। আমরা আগামী ১০ দিনের মধ্যে জনবল সংকট থাকা সত্ত্বেও ড্রেনগুলোতে ব্লিচিং ও পেস্টিসাইড প্রয়োগ করব, যাতে করে মশার লার্ভাগুলো মারা যায়।