মেঘনা নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় এম বি নূরউদ্দিন নামের একটি পণ্যবাহী ট্রলার ডুবে গেছে। সোমবার (২৮ জুলাই) নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট থেকে নিঝুমদ্বীপে যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ট্রলারে থাকা কোটি টাকার মালামাল পানিতে তলিয়ে যায়। এ ঘটনায় নিঝুমদ্বীপের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম ক্ষতির মুখে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে তিন দিন হাতিয়ার সঙ্গে নৌযোগাযোগ বন্ধ থাকার পর সোমবার ভোরে হাতিয়ার চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া এম বি নূরউদ্দিন নামের পণ্যবাহী ট্রলারটি নিঝুমদ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করছিল। মেঘনা নদীর মাঝপথে একটি বালুবাহী ব্লকহেড অসতর্কভাবে ট্রলারটিকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে মুহূর্তেই ট্রলারটি হেলে পড়ে এবং কিছু সময়ের মধ্যেই ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা চাল, ডাল, তেল, সবজি, পোশাক, নির্মাণসামগ্রীসহ প্রায় কোটি টাকার পণ্য নদীতে ডুবে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ব্লকহেডগুলোর বেপরোয়া চলাচল এবং অভ্যন্তরীণ নৌপথে পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণেই এমন দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তারা প্রশাসনের কাছে ব্লকহেড চলাচলের নিয়মিত তদারকি ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
নিঝুমদ্বীপের ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন দিন নৌ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় সবার মালামাল ঘাটে জমে ছিল। একেকজন ব্যবসায়ীর অন্তত ১০-১২ লাখ টাকার মালামাল ছিল ট্রলারে। সবকিছু নদীতে হারিয়ে গেল। অনেক কিছু আবার ভেসে গেছে। এখন কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।
এদিকে একই সময় ব্লকহেডের ধাক্কায় একটি মাছধরা ট্রলার ডুবে গেছে। এতে সাকিব উদ্দিন (১৭) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে এবং আরাফাত নামে একজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুই জেলে, যাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহত সাকিব উদ্দিন হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের শুল্লুকিয়া গ্রামের মনির উদ্দিনের ছেলে। নিখোঁজ আরাফাতের বাড়ি সুখচর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। আহত দু'জনের নাম আফছার ও রহমান।
জেলেদের বরাতে জানা গেছে, মাছ ধরা শেষে ট্রলারটি নদীর কিনারায় নোঙর করে ঘুমাচ্ছিলেন চার জেলে। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে দক্ষিণ দিক থেকে আসা একটি ব্লকহেড ট্রলারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ট্রলারটি উল্টে যায়। পরে জেলেদের চিৎকারে আশপাশের জেলেরা এসে দুজনকে জীবিত উদ্ধার করেন। এক ঘণ্টা পর নদীতে ভাসমান অবস্থায় সাকিব উদ্দিনের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তবে আরাফাত এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী জামসেদ নামে এক জেলে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আহতদের চিৎকার শুনে আমরা নদীতে ঝাঁপ দেই। তখন ব্লকহেডটি উত্তর দিকে চলে যায়। অন্ধকার থাকায় সেটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। দুর্ঘটনার খবরে নিহত ও নিখোঁজ জেলেদের স্বজনরা নদীর তীরে ভিড় করেন। অনেকে পানিতে নেমে নিখোঁজ জেলেকে খোঁজার চেষ্টা চালান।
নলচিরা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আশিষ চন্দ্র সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি শুনে আমাদের টিম ঘটনাস্থলে গিয়েছে। বৃষ্টি ও খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে সেখানে পৌঁছাতে একটু সময় লেগেছে। প্রাথমিকভাবে ব্লকহেডগুলোর পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।