প্রকৃত মালিককে জমির দখল বুঝিয়ে দিয়ে গাজীপুরে এই প্রথম ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন-২৩ কার্যকর করা হয়েছে। দেশে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন পাস হওয়ার পর এ আইনে আদেশ হওয়া একাধিক মামলার মধ্যে প্রথমবারের মতো গাজীপুরে একটি মামলার রায় ঘোষণা করে সে রায় সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালিয়ে অবৈধ দখলকারীকে উচ্ছেদ করে মূল মালিককে দখল বুঝিয়ে দিয়েছেন। আদালতের রায় বাস্তবায়ন ও উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভূমি হুকুম দখল কর্তকর্তা (এলএও) ইশতিয়াক আহমেদ।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো: কায়সার খসরু জানান, ‘দেশে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন কার্যকর হওয়ার পর এ আইনে গাজীপুরে এটিই প্রথম কোনো রায় ঘোষণা করে সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আদেশ হওয়া অন্যান্য রায়ও দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’
এদিকে, আলোচিত আইনে নির্ধারিত ৯০ দিনের মধ্যে মামলার রায়ে ন্যায় বিচার পেয়ে মামলার বাদি ও জমির মূল মালিকও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
মামলার নথি ও বাদিপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানার পশ্চিম ভুরুলিয়া এলাকার মৃত শেখ হাদু রহমানের ছেলে শেখ শাহ জামাল চলতি বছরের গত ১৬ জানুয়ারি গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি অভিযোগ (পিটিশন মামলা নং- ১২/২০২৫) দায়ের করেন। উক্ত মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, গাজীপুর মহানগরীর সদর মেট্রো থানাধীন পশ্চিম লক্ষীপুরা এলাকার সিরাজুল ইসলাম, পারভেজ মিয়া, পলাশ মিয়া, আলাউদ্দিন গং সদর মেট্রো থানাধীন চান্দনা মৌজায় বাদির পৌনে ৯ শতাংশ জমি থেকে বাদিকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ বা দখলচ্যুত করেন। ফলে মামলার বাদি তার দখল পুনর্বহাল করার জন্য আদালতে আবেদন করেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে গত ১৩ এপ্রিল গাজীপুর সদরের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য আদালত নির্দেশনা দেন। সে আলোকে গত ৭ মে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
পরে আদালত তদন্ত প্রতিবেদন, দ্বিতীয় পক্ষের লিখিত জবাব ও দাখিলকৃত নথিপত্র পর্যালোচনা করেন। আদালতের কাছে প্রমাণিত হয় যে, আবেদনকারী আইনানুগভাবে তফসিলভুক্ত ভূমি দখলে রাখবার অধিকারী ও তিনি উক্ত ভূমি ভোগ-দখল করছিলেন। এছাড়াও বিবাদিরা আইনানুগ প্রক্রিয়া ছাড়াই বাদিকে উচ্ছেদ বা দখলচ্যুত করেছেন। একারণে গত ২০ জুলাই আদালত বিবাদিদেরকে ১৫ দিনের মধ্যে অবৈধ দখল পরিত্যাগ করে বর্ণিত জমি থেকে স্থাবর-অস্থাবর স্থাপনা (যদি থাকে) নিজ দায়িত্বে অপসারণ করে বাদির অনুকূলে ভূমির দখল হস্তান্তর করার নির্দেশ দেয়।
আদেশে আরো বলা হয়, অন্যথায়, বিবাদিদের অবৈধ দখল থেকে উচ্ছেদ করে আবেদনকারীকে দখলে পুনর্বহাল করা হবে এবং প্রয়োজনে বিবাদিপক্ষের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ বা ক্রোক করা হবে এবং বিবাদীদের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন ও আদেশ অমান্যের কারণে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু বিবাদিরা আদালতের আদেশ অমান্য করায় গত ২০ আগস্ট গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সালমা খাতুন পিটিশন মামলা নং-১২/২৫ এর রায় বাস্তবায়নের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি হুকুম দখল কর্তকর্তাকে (এলএও) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ দেয়।
ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিবাদিদের দখল থেকে উচ্ছেদ করার জন্য বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এ কার্যক্রমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রয়োজনীয় আইনগত সহযোগিতা দেয়।
জমির দখল ফিরে পেয়ে মামলার বাদি ও জমির মূল মালিক শেখ শাহ জামাল বলেন, ‘আমি ক্রয় সূত্রে জমির মালিক। গত ২০২৩ সালে বিবাদিরা আমাকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ করে সেখানে টিনশেড ঘর করে ভাড়া দিয়েছিল।’
বেদখল হওয়ার দুই বছরের মাথায় মামলা দায়ের করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি জমির দখল ফিরে পেয়েছেন। এজন্য তিনি অন্তবর্তী সরকার ও গাজীপুর জেলা প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করায় ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এ বিষয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ জানান, ‘আদালতের আদেশ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে উচ্ছেদ অভিযান শেষে জমির মূল মালিকের নিকট দখলস্বত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এলাকার পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে।’