দুই মাস সাগরে মাছ ধরা বন্ধ। এ সময় নেই অন্য কোনো কর্মসংস্থান। জীবন-জীবিকা নিয়ে নতুন সংকটে পড়েছেন চরফ্যাশনের অর্ধ লাখের বেশি জেলে। দীর্ঘদিনের বিরতির কারণে লোকসানের মুখে পড়েছেন মাছ ব্যবসায়ীরাও।
জেলেদের তথ্যানুযায়ী, জেলার ২০টি ঘাটের দেড় হাজার ফিশিং ট্রলারের জেলেরা বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। তবে কর্মহীন জেলেদের পুনর্বাসনে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে মৎস্য বিভাগ।
২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাগরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারির পর জালসহ মাছ ধরার উপকরণ গুছিয়ে রাখছে চরফ্যাশন শামরাজ ঘাটের জসিম উদ্দিনের ট্রলারের মাঝি-মাল্লারা। এরপর থেকে বেকার জীবনে চলছে নানা সংকট।
বর্তমানে বাজারে নিত্যপণ্যের উচ্চ দামে নাকাল সব-শ্রেণির ক্রেতারা, নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তরাও এখন অস্বস্তিতে। তার উপর সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের দুর্যোগের কারণে ধারদেনাও জুটছে না।
জসিমের মতো একই সংকটে থাকা শতাধিক ফিশিং ট্রলার শামরাজ ঘাটে বেঁধে অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলেরা। মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতেও মাছের আকাল চলছে। তাই জীবন-জীবিকা নিয়ে হতাশ তারা।
সামরাজ নতুন সুলিজ এলাকার মৎস্যজীবী কামাল উদ্দিন মাঝি (৩৫) বলেন, সংসারের অভাব-অনটনের কারণে পড়াশোনা না করে ছোট থেকেই এই পেশায় নিয়োজিত হয়েছি। কোনো বছর বেশ ভালোই আয় হয় আবার কোনো বছর গুনতে হয় লোকসান। এভাবেই কেটেছে প্রায় ২০টি বছর। গভীর সমুদ্রে ৬৫ দিনের অভিযান দেওয়ার কারণে আমরা এখন নদীগুলোতে মাছ ধরি। এবছর তুলনামূলক অন্যান্য মাছসহ ইলিশ মাছও কম পাওয়া যাচ্ছে। পরিবারে বউ-ছেলে-মেয়ে আছে। আমরা চলব কি করে। এই মাছ ধরার ওপর দিয়েই তো আমরা চলি।
সংকটাপন্ন জেলেদের সহায়তার কথা জানালেন চরফ্যাশন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার।
তিনি আরও বলেন, ২০ মে থেকে গভীর সমুদ্রে অভিযান শুরু হয়েছে যা চলবে ২৩ জুলাই পর্যন্ত। সমুদ্রে ৬৫ দিনের অভিযানে মৎস্যজীবীরা নদীতে মাছ ধরতে পারবেন না। এবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়েছে যার জন্য ইলিশ মাছ নদীতে পরিভ্রমণ করতে পারছে না। তবে এখন যেহেতু বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে তাই আশা করা যায় সামনের দিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরা পড়বে।
কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন এস এম মঈন উদ্দীন জানান, দেশের মৎস্য সম্পদের সুরক্ষা ও মাছের বংশবিস্তারে সাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। জেলেদের সাগরে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, চরফ্যাশন সহ জেলার নিবন্ধিত ১ লাখ ৩২ হাজার জেলের মধ্যে এ বছরই প্রথমবারের মতো সমুদ্রগামী ১ লাখ ৭ হাজার জেলেকে প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে।