টানা বর্ষণে বরিশালের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা

গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট বিভিন্ন স্থানে হাঁটু সমান পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার মানুষ। 

শুক্রবার (২ আগস্ট) সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে নগরীর প্রাণকেন্দ্র বটতলা থেকে চৌমাথা সড়ক, বগুড়া রোডের একাংশ, রাজাবাহাদুর সড়কসহ অলিগলিতে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। এছাড়া নগরীর চৌমাথা সিঅ্যান্ডবি রোড সংলগ্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি), শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বিএম কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পানি জমে রয়েছে।

সিএনজি চালক শামিম বলেন, বৃষ্টির কারণে ব্যাটারি ও ইঞ্জিন চালিত যানবাহন চালানো দুষ্কর হয়ে পড়েছে। পানি লেগে গাড়ি বিকল হয়ে যাচ্ছে। মোটরে পানি ঢুকে সমস্যা হওয়ায় তা সারাতে বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে। এছাড়া পানির কারণে রাস্তাঘাটে মানুষজনও কম, তাই আয়ও কমেছে।

নগরীর বগুড়া রোডের বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, ‘সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় বগুড়া রোডের এই সড়কটি। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করায় মূলত এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।’

বরিশাল নগরীর বটতলা এলাকার বাসিন্দা কালু জানান, যতই খাল খনন আর ড্রেন পরিষ্কার করুক বটতলা থেকে চৌমাথা সড়ক সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। তাই বাসা থেকে বের হয়ে বাজারসহ সব কাজই হাঁটুসমান পানির মধ্যে করতে হচ্ছে।

জসিম নামের পথচারী বলেন, ‘একসময় বরিশাল নগরীতে ২৪টি খাল ছিল। কিন্তু এখন ৩টির বেশি সচল নেই। এর ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় রূপ নেয় বরিশাল। বিশেষ করে বটতলা এলাকায় খাল ভরাট করে দোকান করায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে।’

বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, সকাল ৯টা পর্যন্ত বরিশালের কীর্তনখোলাসহ ছয় নদীর পানি পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। এসব নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার অনেক নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য স্থায়ী উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপিকা শাহ সাজেদা বলেন, মেয়র আসে মেয়র যায়, কিন্তু বরিশালের জলাবদ্ধতা যায় না। জলাবদ্ধতা ও সড়কে দুর্ভোগ বরিশালবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে বিভিন্ন সভা সমাবেশও করা হয়েছে। আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্থায়ী সমাধান চাই।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের আইসিটি কর্মকর্তা (চঃদাঃ) ও জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন রোমেল বলেন, নগরীর বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ৮০০ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া আরো ৯০০ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। এই বরাদ্দ অনুমোদন পেলে নগরীতে কোনো দুর্ভোগ থাকবে না।

এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, নগরীর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা লক্ষ্য করেছি, কিন্তু এখানে জেলা প্রশাসনের তেমন কিছু করণীয় নেই, এটা সম্পূর্ণই নগর কর্তৃপক্ষের কাজ। তারপরও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে কি করা যায় দেখছি।

এ দিকে বরিশাল আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ ১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজও দিনভর বৃষ্টি থাকবে, আজ শনিবার নাগাদ বৃষ্টি কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এটা মৌসুমের স্বাভাবিক বৃষ্টি বলে জানান তিনি।