চরফ্যাশন উপজেলায় বোয়াল, রুই, কাতলা, কার্প, রিঠাসহ বিভিন্ন দেশি মাছের পোনা শিকার করে বাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি চলছে। এসব পোনার বেশির ভাগই ধরা হচ্ছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি দিয়ে। মৎস্য আইনে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছ ধরা নিষেধ থাকলেও এক শ্রেণির মানুষ তা মানছে না।
চরফ্যাশনসহ সারাদেশে চায়না দুয়ারির ব্যবহার শুরু হয় বছর পাঁচেক আগে। শুরুতে এই জাল চীন থেকে আমদানি করার কারণে এর নাম দেওয়া হয় চায়না দুয়ারি। তবে এখন এ ধরনের জাল দেশেই তৈরি হচ্ছে। সূক্ষ্ম জালে গোলাকৃতি বা চারকোণার রড পরিয়ে খোপ খোপ করে বিশেষ ধরনের ফাঁদ তৈরির মাধ্যমে এটি তৈরি করা হয়।
এই ফাঁদ উচ্চতায় দেড় থেকে ২ ফুট এবং লম্বায় ৬০ থেকে ১০০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে। অল্প বা গভীর, যেকোনো পানিতে এই ফাঁদ পেতে রাখলে তাতে বড় মাছ, মাছের পোনা, এমনকি ডিম পর্যন্ত ধরা পড়ে। দ্রুত এই জাল মাছ শিকারিদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। তবে মাছের জন্য মারাত্মক হুমকি হওয়ায় মৎস্য অধিদপ্তর এই জাল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলার সদর বাজার ছাড়াও উপজেলার প্রশাসন অনুমোদিত পৌরসভাসহ ৪ থানায় ২১টি ইউনিয়নে ৬০টি হাট বাজারের অর্ধশতাধিক জালের দোকান রয়েছে। আর এসব দোকানের প্রতিটিতেই নিষিদ্ধ হলেও সবচেয়ে বেশি যে জাল বিক্রি হচ্ছে তা হলো চায়না দুয়ারি। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়। ফলে এগুলো বিক্রি হয় কিছুটা রাখঢাক করে।
অবৈধ জাল ব্যবসায়ীরা ঢাকা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন পরিবহণ সংস্থার মাধ্যমে এই জাল চরফ্যাশন এনে বিক্রি করছেন। নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালে যেমন নিধন হচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছের পোনা। এতে একদিকে ধ্বংস হচ্ছে মৎস্য সম্পদ ও জলজপ্রাণী, অন্যদিকে হুমকির মুখে পড়েছে মৎস্য উৎপাদন ও জীববৈচিত্র্য। এসব বন্ধের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চরফ্যাশন বাজারের চার-পাঁচজন জাল ব্যবসায়ী বলেন, শুধু চরফ্যাশন বাজারেই ১০টির মতো জালের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে এক সময় কারেন্ট জাল বিক্রি হতো। এখন চায়না দুয়ারি বিক্রি হচ্ছে বেশি। ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সঙ্গে দামদর ঠিক করার পর আড়ালে থাকা জায়গা থেকে নিষিদ্ধ এই জাল এনে বিক্রি করে থাকেন।
ব্যবসায়ী পাটোয়ারি বলেন, চরফ্যাশনের সদরের বাজার মাছের জন্য একসময় প্রসিদ্ধ ছিল। অথচ চায়না দুয়ারির জন্য দেশি মাছ প্রায় হারিয়েই গেছে। বাজারে পোনা মাছ এনে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। এই জাল দিয়ে পোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আকারের মাছ ধরায় উপজেলার নদী ও অন্য প্রাকৃতিক জলাশয় মাছশূন্য হয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, আমাদের মৎস্য দপ্তরের অভিযান চলমান আছে। পোনা মাছ রক্ষায় আগে সবাইকে সচেতন হতে হবে। মানুষ সচেতন নাহলে শুধু অভিযান করে বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নওরীর হক বলেন, চায়না জাল ব্যবহার আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এক শ্রেণির অসাধু মৎস্য শিকারি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চায়না দুয়ারি দিয়ে দেশি প্রজাতির মাছ শিকার করছে। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার বন্ধে অভিযান চলছে। তবে জেলেদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।