আমন ধানের ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণে ভোলার লালমোহন উপজেলার কৃষকরা প্রায় দিশেহারা। কীটনাশক এবং ফাঁদ ব্যবহার করেও ইঁদুরের আক্রমণ ঠেকাতে না পারায় আতঙ্গে দিনাতিপাত করছেন কৃষকেরা। ক্ষেতের ধান গাছ কেটে সাবাড় করছে ইঁদুর। আমন ক্ষেতে ইঁদুরের এমন বেপরোয়া আক্রমণে রীতিমতো কৃষকদের মাথায় হাত।
লালমোহন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এ বছর ২৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে, অতিবৃষ্টিতে ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সবশেষ এবার লালমোহন উপজেলায় ২৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। হিসেবে অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও এ বছর ২০০ হেক্টর জমিতে কম আমন আবাদ হয়েছে।
তবে, এই উপজেলার কৃষকদের চাষ করা আমন ধানের মধ্যে রয়েছে উফশী জাতের; বিআর-১১, বিআর-২২, বিআর-২৩, ব্রি ধান-৪১, ব্রি ধান-৪৪, ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫২, ব্রি ধান-৭২, ব্রি ধান-৭৩, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৭৬, ব্রি ধান-৭৭, ব্রি ধান-৮৫, ব্রি ধান-৮৭, ব্রি ধান-৯৩ এবং ব্রি ধান-৯৫। এছাড়া স্বর্ণা জাতের- বিনা ধান-১৭ ও বিনা ধান-২০। স্থানীয় জাতের মধ্যে রয়েছে কাজল শাইল, ঘিকজ, কালিজিরা, কালাকোরা, লোতর, টেপুসহ লেম্ভু ধান।
সরেজমিনে লালমোহন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠজুড়ে কেবল সবুজের সমারোহ। তবে সেই সবুজের বুকে কেউ যেন ক্ষত চিহ্ন এঁকে দিয়েছে, ইঁদুরের আক্রমণে দূর থেকে আমনের ক্ষেতে চোখ পড়লে এমনটাই মনে হচ্ছে। কৃষকরা ইঁদুর দমন করতে নানা ধরনের ওষুধ ও ফাঁদ ব্যবহার করেও মিলছে না প্রতিকার। ক্ষেতে ধান গাছের অবস্থা ভালো হলেও শেষ পর্যন্ত ইঁদুরের বেপরোয়া আক্রমণে ফসলের ক্ষতির ভাবনায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকেরা।
উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক হানিফ বয়াতি এবং রেজাউল করিম সোহাগ দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, মৌসুমের শুরুতেই অতিবৃষ্টির কারণে আমন ধানের বীজতলা কয়েকবার নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও বিভিন্নভাবে চারা সংগ্রহ করে নির্ধারিত জমিতে আমনের আবাদ করেছি। তবে সেই ধানে এখন ব্যাপকভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে ইঁদুর। পোকার চেয়ে এখন বেশি ইঁদুর আতঙ্কে আছি। ক্ষেতে ইঁদুর আক্রমণ করে ধান গাছ কেটে ফেলছে। নানা ধরনের ওষুধ আর ফাঁদ ব্যবহার করেও ইঁদুরের এই আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে কাঙ্ক্ষিত ফলন না পাওয়ার সম্ভাবনাই অনেক বেশি।
একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চরছকিনা এলাকার কৃষক সেলিম দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ধানের চাষ করছি। এ বছর ১২০ শতাংশ জমিতে আমন ধানের চাষ করেছি। তবে যখনই ধান গাছগুলো বড় হয়ে উঠতে শুরু করেছে তখনই বেপরোয়াভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে ইঁদুর। আমার ১২০ শতাংশ জমির অন্তত ৩০ শতাংশের ধান গাছ ইঁদুর কেটে ফেলেছে। এ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি। কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়েও এই ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা মিলছে না।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হাচনাইন দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, ইঁদুর একটি জাতীয় সমস্যা। ইঁদুর সত্যিই অনেক ফসলের ক্ষতি করে। তবে বিভিন্ন সভার মাধ্যমে আমরা কৃষকদের নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা করে থাকি। যাতে করে কৃষকরা ইঁদুরের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে পারেন।