ভোলার লালমোহন উপজেলায় ব্যাপকভাবে বেড়েছে নিউমোনিয়ার প্রকোপ। এতে কাবু হয়ে পড়ছে শিশুরা। বিভিন্ন এলাকা থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ছুটছেন স্বজনরা। গত ২ সপ্তাহ ধরে এ উপজেলায় নিউমোনিয়ার এমন প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অধিকাংশ শিশুই ৫ বছরের কম বয়সী। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যা সংকটের কারণে একেকটি বেডে দুই থেকে তিন জন করে শিশুকে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া অনেককে মেঝেতে থেকেও নিতে হচ্ছে চিকিৎসা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ঋতু পরিবর্তনের কারণে গত দুই সপ্তাহ ধরে দেখা দিয়েছে নিউমোনিয়া। দিনে গরম, রাতে ঠাণ্ডার ফলেই শিশুরা বর্তমানে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গড়ে অন্তত ১০ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে। গত ১৫ দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে দেড় শতাধিক শিশু।
লালমোহন ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের মো. আলম বেপারী বলেন, আমার ৪ বছর বয়সী মেয়ে ৭ দিন আগে জ্বর, সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হয়। তখন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ নিয়ে মেয়েকে খাওয়াই। তবে এতে মেয়ের শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় ৪ দিন আগে তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি।
চিকিৎসক জানান, আমার মেয়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। যার জন্য চিকিৎসক তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রেখেছেন। এখনও তার চিকিৎসা চলছে। তবে এখানে থাকতে অনেক অসুবিধা। বেডের অভাবে একটিতে দুই-তিন জন শিশুকে নিয়ে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া কেউ কেউ বেড না পেয়ে মেঝেতে থাকছেন।
ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের চর কালাচাঁদ এলাকার বাসিন্দা মো. রাহাত বলেন, আমার ৫ মাসের শিশু হঠাৎ করে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এরপর তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে চিকিৎসক ভর্তি রাখতে বলেন। ২ দিন ধরে তাকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছি। এখান থেকে প্রয়োজনীয় তেমন কোনো ওষুধ পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। তবে চিকিৎসকরা নিয়মিত এসে দেখে যাচ্ছেন। এছাড়া নার্সরাও আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. মহসীন খান বলেন, উপজেলায় গত ২ সপ্তাহ ধরে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আমরা লক্ষ্য করেছি; ঋতু পরিবর্তনের কারণেই মূলত শিশুরা নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
তবে আক্রান্ত শিশুদের আমাদের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিচ্ছেন। এই নিউমোনিয়া থেকে শিশুদের মুক্ত রাখতে অভিভাবকদের, বিশেষ করে মায়েদের অত্যন্ত সচেতন হতে হবে। যেন কোনোভাবেই শিশুদের ঠাণ্ডা লাগতে না পারে। তাহলে নতুন করে তেমন আর কেউ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হবে না বলে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, ৫০ শয্যার এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু ওয়ার্ডে ১৫টি শয্যা রয়েছে। তবে শিশু রোগী বাড়ায় প্রত্যেক বেডে দুই-তিন জন শিশুকে রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। শিশুদের সংখ্যা বাড়ায় অনেক সময় মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। আমরা এই শয্যা সংকট দূর করতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত সময়ের মধ্যে আবেদন করবো, যেন ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে ১০০ শয্যায় উন্নতি করা হয়।