শীতের শুরুতেই ভোলায় ঠান্ডাজনিত রোগ নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শিশু রোগীদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোতে তীব্র বেড সংকট দেখা দিয়েছে।
ভোলা সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ভোলা সদর হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় ভর্তি হয়েছেন ৯ জন এবং ডায়রিয়ায় ২২ জন। জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল মিলিয়ে একই সময়ে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা ২৬ জন এবং ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা ৬৩ জন। গত ৭ দিনে জেলায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২১৪ জন, ডায়রিয়ায় ৪৯৫ জন, এবং এই সময়ে নিউমোনিয়ায় ১ শিশু ও ডায়রিয়ায় ১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
সরেজমিনে শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, করিডোরের মেঝেতেই বিছানা পেতে ছোট্ট রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বেডেই একাধিক শিশু থাকায় স্বজনদের জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসা সেবা নেওয়া অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি হাসপাতালে সেবা ঠিকভাবে মিলছে না। ক্যানুলা, সিরিঞ্জ, নেবুলাইজার মাস্কসহ বেশিরভাগ সরঞ্জামই বাইরে থেকে কিনে আনতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে।
শিবপুর ইউনিয়নের কোহিনূর বেগম বলেন, ‘একই বেডে দুই শিশু নিয়ে থাকা খুব কষ্টকর। বেশিরভাগ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।’
মমতাজ নামের আরেকজন বলেন, ‘বেডের নিচে ছাড়পোকার উপদ্রব ভয়াবহ। খাবার ও কাপড়ে ঢুকে পড়ে। শিশুর কানে ঢুকে যাওয়ার ভয়ে ঘুমাতে পারি না।’
দৌলতখানের মেহেদী হাসান জানান, ‘সামান্য শ্বাসকষ্টেও বরিশাল রেফার্ড করা হয়। নদীপথে শিশু নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর।’
ভোলা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. তৈয়বুর রহমান খবর সংযোগকে বলেন, ‘শিশু রোগীর চাপ স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। বেড সংকুলান না হওয়ায় মেঝেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। শীতে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ে, তাই অভিভাবকদের সচেতন হওয়া জরুরি।’
ভোলার সিভিল সার্জন ডা. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘শীতে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া বেড়ে যায়। তাই খাবার ও পানির বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। হাসপাতালে সরঞ্জাম আছে, তবে রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় কিছু ক্ষেত্রে সময়মতো সরবরাহে সমস্যা দেখা দেয়। দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
শীতের প্রভাবে দ্রুত বেড়ে যাওয়া শিশুদের নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগের কারণে ভোলার হাসপাতালগুলোতে তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এই মুহূর্তে চিকিৎসার মান বজায় রাখা, অতিরিক্ত বেড বাড়ানো এবং অভিভাবকদের সচেতনতাই এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি।