বিপন্নের পথে কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী তিন পুকুর

পর্যটন শহর কক্সবাজারে অস্তিত্ব বিপন্নের পথে ঐতিহ্যবাহী তিন পুকুর। গোলদিঘী, লালদিঘী ও নাপিতের পুকুর এখন পশুদের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেখান থেকে চুরি হচ্ছে আলোকসজ্জার দামি যন্ত্রাংশসহ নানা জিনিসপত্র। এসবের জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছেন স্থানীয়রা। 

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, কোটি টাকা ব্যয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য তৈরিকৃত পুকুর যেন ছাগলের খামার। কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নাপিতা পুকুরের অবস্থা এখন সেরকমই। পুকুরটি হয়ে পড়েছে ময়লার ভাগাড় ও ছাগল চারণভূমি। ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরের চারপাশে চলাচলের রাস্তাগুলোতে জমেছে আবর্জনার স্তূপ।

ঐতিহ্যবাহি লালদিঘী পুকুর: ছবি- খবর সংযোগ

নাপিতা পুকুরের মতো একই ভাগ্য লালদিঘী ও গোলদিঘী পুকুরের। ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরগুলোর পানি অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় শুকিয়ে গেছে। ছুটির দিনে গানের সাথে পানির কৃত্রিম ঝর্ণার প্রদর্শনীও বন্ধ গোলদিঘীতে। চুরি হয়ে গেছে মূল্যবান আলোকসজ্জাগুলো। পুকুরগুলোর এমন বেহাল দশায় স্থানীয়রা দুষছেন নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে। 

গোলদিঘীর পাড় এলাকার বাসিন্দা আসিফ বলেন, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের জন্য একটি অভিনব পর্যটন স্পট হতে পারতো এসব জলাধার। এগুলোকে তৈরি করাও হয়েছিল বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে। তবে মাত্র কয়েক বছরেই পুকুরগুলোতে যেন ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয় রাতে।

রাতে পুকুরের ভুতুড়ে চিত্রের কথা উল্লেখ করে অন্য এক বাসিন্দা জাহেদুল হক বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ লাইট না থাকা এবং কিছু কিছু লাইট চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে পর্যটক তো দূরের কথা স্থানীয়রাও এসব পুকুরপাড়ে বসতে ভয় পায়। আর পুকুরগুলোর আশেপাশে ময়লা আবর্জনা তো আছেই। 

ঐতিহ্যবাহি গোলদিঘী পুকুর: ছবি-খবর সংযোগ

যথাযথ তদারকি এবং রক্ষণাবেক্ষণ না থাকায় পুকুরগুলোর এমন অবস্থা উল্লেখ করে স্থানীয় বাসিন্দা সাইদ স্বাধীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান, সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সঠিক ব্যবস্থাপনায় প্রাণ ফিরে পাক এসব সরকারি স্থাপনা।

জানা গেছে, কক্সবাজার শহরকে পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার অংশ হিসেবে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে লালদিঘী, গোলদিঘী ও নাপিতা পুকুরকে কেন্দ্র করে সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। যা ২০২০ সালের মাঝামাঝিতে উদ্বোধন করা হয়। এরপর দুই বছর ঠিকঠাক তদারকি চললেও ২০২২ সালের আগস্টে কউক চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত কমোডর নুরুল আবছার। এরপর থেকে অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায় গোলদিঘীর ওয়াটার লাইট শোসহ তিন পুকুরের বিশেষ তদারকি।

এদিকে গত ৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের পর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এসব পুকুর কক্সবাজার পৌরসভাকে হস্তান্তর করে। তারপর পুকুরগুলোর তদারকি ব্যবস্থা আরো নাজেহাল হতে থাকে।

ঐতিহ্যবাহি নাপিতের পুকুর: ছবি-খবর সংযোগ

পৌর কর্তৃপক্ষের বলছে, ২০২৪ সালের আগস্টে বিভিন্ন স্থাপনার মতো পুকুরগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক কিছুই চুরি হয়ে গেছে।

তবে পুকুরগুলোর জন্য প্রকৌশলী নিয়োগের কথা জানিয়ে কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পরাক্রম চাকমা বলেন, পৌর কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব নেওয়ার পর পুকুরগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রকৌশলী নিয়োগ করা হয়েছে। দ্রুত পুকুরগুলোর সংস্কার কাজ শুরু হবে। এছাড়া এসব পুকুরের রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির জন্য কিছু আনসার কর্মীও নিয়োগ করা হয়েছে। প্রতি পুকুরের জন্য ৪ জন করে আনসার বাহিনীর একটি দল গঠন করা হয়েছে। ফলে পুকুরগুলো ঘিরে সকল সমস্যা সমাধান ও পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে পৌর কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর।

স্থানীয়দের দাবি এসব জলাধার বাঁচাতেই সর্বাগ্রে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। কক্সবাজার শহরের অগ্নিনির্বাপণের ক্ষেত্রেও এই পুকুরগুলোর পানির উপর নির্ভর করতে হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে।