খাগড়াছড়িতে সহিংসতা: তিন মামলায় ১১০০ আসামি, ১৪৪ ধারা বহাল

খাগড়াছড়িতে সংঘর্ষ, সহিংসতায় ও গুইমারায় হত্যার ঘটনায় ৩টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সদর থানায় একটি এবং গুইমারা থানায় ২টি মামলা করা হয়েছে। বুধবার (১ অক্টোবর) বিকেলে এ মামলা দায়ের করা হয় বলে জানা যায়। এসব মামলায় হত্যা, ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলাসহ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে দাঙ্গার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি থানার ওসি আব্দুল বাতেন মৃধা ও গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী।

খাগড়াছড়িতে বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সাপ্তাহিক হাটের দিনে সকাল থেকে বাজারে পাহাড়ি ও বাঙালিদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক সময়ের মতোই। স্বাভাবিক হয়েছে খাগড়াছড়ির সব সড়কের যানবাহন চলাচলও। খুলেছে দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও এখনো ১৪৪ ধারা বহাল রেখেছে প্রশাসন।

থানা সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়ি সদর থানার ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ভাঙচুর, দাঙ্গা সৃষ্টি ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ৬০০-৭০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেন এসআই মো. শাহরিয়ার। অপরদিকে গুইমারা থানায় হত্যা, পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে মামলা দুইটির বাদী এসআই সোহেল রানা।

গুইমারা থানার ওসি এনামুল হক চৌধুরী জানান, দায়েরকৃত মামলায় অজ্ঞাত ২৫০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে গুইমারা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শিক্ষার্থী ধর্ষণের অভিযোগে আটক শয়ন শীলকে ৬ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ওসি আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, রিমান্ড শেষে আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

সবকিছু স্বাভাবিকের আগে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার নয়

সবকিছু স্বাভাবিক হলেই ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার। গতকাল সন্ধ্যায় সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত স্বনির্ভর বাজার পরিদর্শনকালে তিনি একথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, খাগড়াছড়ির সাম্প্রতিক ঘটনা তদন্তে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। এখন তথ্য সংগ্রহ চলছে। আগামী রোববার থেকে সরেজমিনে কাজ শুরু হবে। সবকিছু স্বাভাবিক হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতামতের ভিত্তিতে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়ার বিষয়ে ঘোষণা করা হবে।

এ ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ ও ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। পরে বিশেষ বরাদ্দের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলে তিনি জানান। এ সময় পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় উপস্থিত ছিলেন।

৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সহিংসতার ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয় তিনি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।

গুইমারার রামসু বাজার সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম। ডিসি বলেন, এখানে যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকবে। আহত ও নিহত সবাইকে সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের ৮ দফা দাবির মধ্যে ইতোমধ্যে ৭টি দাবি চিহ্নিত করে কাজ শুরু হয়েছে। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে। তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম জেলা প্রশাসনের পর্যবেক্ষণে চলছে।

আগামী ৫ অক্টোবর অবরোধ পর্যন্ত স্থগিত

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর অবরোধ পর্যন্ত স্থগিত করেছে আন্দোলনকারী জুম্ম ছাত্র জনতা। ওইদন রাত ৮টার দিকে নিজস্ব ফেইসবুক পেইস থেকে এ ঘােষণা দেয় তারা। ৩ পার্বত্য জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা অবরোধের ৪র্থ দিনে শারদীয় দুর্গোৎসবকে সম্মান জানিয়ে এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত ৮ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে চলমান অবরোধ কর্মসূচি আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিতের ঘােষণা দেওয়ার কথা জানায় জুম্ম ছাত্র জনতার মিডিয়া সেল। 

ঘােষণায় বলা হয়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে এক স্কুলপড়ুয়া জুম্ম কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে তারা।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আহুত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় আমাদের ৬ জনের একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। প্রতিনিধিদল প্রশাসনের নিকট ৮ দফা দাবিনামা উপস্থাপন করে, যা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়।

পাশাপাশি প্রশাসন জানিয়েছে, চলমান অবরোধ প্রত্যাহার করা হলে ১৪৪ ধারাও তুলে নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, খাগড়াছড়িতে এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে গত শনিবার খাগড়াছড়িতে অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয় ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’।

অবরোধ চলাকালে সহিংসতার ঘটনা ঘটলে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। গত রোববার ১৪৪ ধারার মধ্যেই গুইমারায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। সেখানে গুলিতে নিহত হয় ৩ জন।