অন্যরকম স্কুলের ছাত্র কৃষক-কৃষাণি

গ্রামের প্রান্তিক কৃষকদের জন্য অন্যরকম স্কুল ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল’। বিভিন্ন বয়সের কৃষক-কৃষাণিরা এই স্কুলের ছাত্রছাত্রী। তাদের হাতে কলমে শেখানো হচ্ছে পুষ্টি উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি ও পরিবেশবান্ধব চাষাবাদের নানা উপায়।
 
এমন চিত্রেরই দেখা মেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের দামচাইল গ্রামে। কৃষকদের বাড়ির খোলা জায়গায় বসে ক্লাস করছেন কৃষক ও কৃষাণিরা। শিক্ষকের কথা শুনছেন এবং তারা শিখছেন নতুন নতুন চাষ পদ্ধতি।
 
সরজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের দামচাইল গ্রামের প্রান্তিক কৃষকদের কৃষি বিভাগের এমন স্কুলে হাতে-কলমে শেখানো হচ্ছে চাষাবাদের নানা কলাকৌশলসহ সারের গুণাগুণ ও ব্যবহার।
 
"পুষ্টি উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি, পরিবেশবান্ধব চাষ" এ স্লোগানকে সামনে রেখে পার্টনার ফিল্ড স্কুল রোপা আমন ধান ও কৃষক সেবা কেন্দ্র এ স্কুল পরিচালনা করছে।
 
 
নজরুল ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, এটি একটি কৃষিবান্ধব স্কুল। এই স্কুল থেকে আধুনিক কৃষির বীজ কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, বীজ তলা তৈরি করতে হয়, কীভাবে চারা (জালা) করতে হয় ও সেই চারা কত দিনের মধ্যে রোপণ করতে হয় তা শিখতে পারলাম।পাশাপাশি ধানের চারা কীভাবে রোপণ করতে হয়, তা হাতে-কলমে শিখতে পেরেছি। এছাড়া সার ও কীটনাশক জমিতে কি পরিমাণ দিতে হয়। আগাছা কীভাবে পরিষ্কার করতে হয় এবং পোকামাকড় থেকে কীভাবে ফসলি জমি রক্ষা করতে হয়, তা শিখেছি।
 
তিনি আরও জানান, ১০টা ক্লাসের মধ্যে ৬টা ক্লাস শেষ করেছি। আরও ৪টা ক্লাস বাকি আছে। ৪টা ক্লাস শেষ করতে পারলে আধুনিক কৃষি সম্পর্কে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারবো।
 
কৃষাণি শামীমা জানান, এখানে ক্লাস করে আগে যা জানতাম না, তা জানতে পারছি। কীভাবে উত্তম বীজ সংরক্ষণ ও রোপণ করতে হয় এবং সারের ব্যবহার করতে হয়, তা শিখতে পারলাম। আগে কৃষি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতাম না, এই ক্লাসে এসে অনেক কিছু শিখেছি।
 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অয়ন দাস জানান, পার্টনার প্রকল্পের আওতায় বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থায়নে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে পার্টনার ফিল্ড স্কুলের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। স্কুলে ২৫ জন কৃষক-কৃষাণির মধ্যে ছাত্র ১৫ ও ছাত্রী ১০ জন। আধুনিক কৃষি সম্পর্কে তাদেরকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পার্টনার স্কুলের আওতায় কমিনিটি বীজ উৎপাদন ও আমন ধানের একটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকে, যাতে করে নতুন ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় তা তারা বাস্তাবে শিখতে পারবে।
 
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার শাহানা বেগম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরে পার্টনার প্রোগ্রামের আওতায় ৪টি পার্টনার ফিল্ড স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। এই স্কুলগুলো মাছিহাতা, সুলতানপুর, সাদেকপুর ও মোহনপুর ইউনিয়ন এ বাস্তবায়িত হচ্ছে। পার্টনার ফিল্ড স্কুলের সংক্ষিপ্ত নাম (পিএফএস)। সাধারণত ১০ সপ্তাহব্যপী এই স্কুলে সপ্তাহের নির্দিষ্ট ১ দিন ক্লাস ও সেশন পরিচালনা করা হয়। রোপা-আমন ধানের ক্ষতিকর ও উপকারী পোকা মাকড় থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদনের সকল প্রযুক্তি ও বীজ সংরক্ষণ, উত্তম কৃষি চর্চার উপর সেশন পরিচালনা করা হয়। তাছাড়া জীবন ধারন বা লাইফস্টাইল মেইনটেইন্যান্স বা পুষ্টি বিষয়ক ধারণা দেওয়া হয় পুষ্টি পিএফএস এ। এক কথায় বলা চলে কৃষকের মাঠে আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছে পিএফএস।
 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার মুন্সি তোফায়েল হোসেন জানান, পার্টনার ফিল্ড স্কুল রোপা আমন ধান ও কৃষক সেবা কেন্দ্র এ স্কুল ২৫ জন কৃষক-কৃষাণি নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রত্যেক কৃষক বলতে গেলে হাতে-কলমে আধুনিক উপায়ে ধান চাষাবাদ সম্পর্কে শিখতে ও জানতে পারছে। সকল পোকামাকড়ই ক্ষতিকারক না, এর ভেতরে কিছু উপকারী এবং ক্ষতিকারক পোকা রয়েছে। ক্ষতিকারক পোকামাকড় মেরে ফেলে, উপকারী পোকা মাকড়গুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য। এই বিষয়গুলো কৃষক-কৃষানীদের হাতে-কলমে শিখিয়ে দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।