আওয়ামী সরকারের শাসনামলে ২০১৩ ও ২০২২ সালে দুইবার গুমের শিকার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী ছাত্র মফিজুর রহমান আশিক ভুগছেন মেরুদণ্ডের যন্ত্রণায়। দিনদিনই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে।
মেরুদণ্ডের ব্যথা নিয়েও তারেক রহমানের রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা বাস্তবায়নে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বাঁশখালীতে চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। নির্বাচনের মাঠে নেমে ৩১ দফা ও ধানের শীষের পক্ষে লাগাতার প্রচারণা চালিয়ে ইতোমধ্যে বাঁশখালীতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন, যা স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন প্রেরণা জুগিয়েছে।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ২ দফা গুমের শিকার আলোচিত এই সাবেক ছাত্রনেতা মফিজুর রহমান আশিক।
জানা যায়, ২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ঢাকার নয়া পল্টন, মিরপুর ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন স্বৈরাচার বিরোধী কর্মকাণ্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত থাকায় ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর রাজধানীর মিরপুর থেকে তুলে নিয়ে যায় সরকারের বিশেষ বাহিনী।
এরপর দীর্ঘ ২ মাস সার্বক্ষণিক চোখ বাঁধা ও হ্যান্ডকাফ পরা অবস্থায় অজ্ঞাত স্থানে গুম করে রেখে ইলেকট্রিক শক ও টানা ঝুলিয়ে রেখে পা থেকে মাথা পর্যন্ত থেঁতলে দেওয়া হয় এবং লোমহর্ষক অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। ওই সময় তাকে পিটিয়ে তার ডান হাতের লিগামেন্ট ছিঁড়ে ফেলা হয়। কোমর ভেঙে দেওয়া হয়। এই ক্ষত নিয়েই অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়ও বিএনপির নানা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি।
অপরদিকে ২০২২ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে সিটিটিসি (কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম) কর্তৃক জঙ্গি নাটক মঞ্চায়নের তথ্যচিত্র ও ভিডিও ফুটেজ দেশি-বিদেশি মিডিয়া, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইউএস অ্যাম্বাসি এবং ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কাছে সরবরাহ করার কারণে তাকে দ্বিতীয় বারের মত গুম করে সিটিটিসি। সেখানে তাকে ব্যাপক শারীরিক নির্যাতন করে ও দুদিন গুম করে রাখা হয়।
পরে তৎকালীন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর তৎপরতা ও পাশাপাশি ইউএস অ্যাম্বাসির হস্তক্ষেপের পরও তাকে মুক্তি না দিয়ে সেদিন সিটিটিসি রাষ্ট্রদ্রোহ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। ওই মামলায় দুদিন রিমান্ড শেষে জেলে পাঠানো হয় এবং দীর্ঘ ৯ মাস জেল খাটার পর মুক্তি পান আশিক।
আশিক বলেন, বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে আমি ২০১৩ ও ২০২২ সালে দুইবার গুমের শিকার হয়েছি। আয়নাঘরের মতো বীভৎস জায়গায় বন্দি ছিলাম। গুমের পর স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে হাতের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে। তারা আমার হাত, কোমর ও আমার হাঁটু ভেঙে দিয়েছিল। সিটিসিসি আমাকে গুম করার পর মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল।
সেদিন যদি বিএনপি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো আমার পাশে না দাঁড়াতো তাহলে আজ আমার কোন হদিস থাকত না। দল করতে গিয়ে এইভাবে অসংখ্যবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। ১/১১ থেকে শুরু করে হাসিনার পতন পর্যন্ত গত ১৭ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামে বহু ত্যাগ, অবদান ও ভূমিকা রাখি।
দেশনায়ক তারেক রহমান ক্লিন ইমেজের ত্যাগী নেতাদের মনোনয়ন দেবেন—এ বিষয়ে তিনি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালীতে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আমি আশাবাদী।