বৌদ্ধ ধর্মীয়গুরু সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথেরো আর নেই

বাংলাদেশি বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু, শতবর্ষী ত্রয়োদশ সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির আর নেই। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন শতবর্ষী এই বৌদ্ধ ভিক্ষু। এই বৌদ্ধ ভিক্ষুর প্রয়াণে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শোক বিরাজ করছে। 

সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথেরোর একান্ত চিকিৎসক ও বৌদ্ধ গবেষক প্রফেসর ডা. প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, আমাদের কিংবদন্তী বৌদ্ধ মনীষা ও সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু প্রয়াত সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাথেরো ভান্তের মরদেহ রাউজানের বিনাজুরী শ্মশান বিহারে নিয়ে যাওয়া হবে আজ রাতে। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) ভেষজ প্রক্রিয়ায় মরদেহ সংরক্ষণ করে রাখা হবে। 

১৯২৫ সালের ১৮ নভেম্বর রাউজানের উত্তর গুজরা (ডোমখালী) গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা প্রেম লাল বডুয়া ও মা মেনেকা রাণী বড়ুয়া। পরে ১৯৪৪ সালে পশ্চিম বিনাজুরী গ্রামের কীর্তিমান সংঘমনীষা সারানন্দ মহাস্থবিরের সার্বিক সহযোগিতায় উপসংঘরাজ গুণালঙ্কার মহাস্থবিরের নিকট হাটহাজারীর জোবরা গ্রামে শ্রামণ্য ধর্মে দীক্ষা নেন। পাঁচ বছর শ্রামণ্য ধর্মের দীক্ষা শেষে ১৯৪৯ সালে রাজানগর থেরবাদ সদ্ধর্মের সূতিকাগার পাষাণসীমায় রাজগুরু ধর্মরত্ন মহাস্থবিরের উপাধ্যায়ত্তে দুর্লভ উপসম্পদা লাভ করেন তিনি। 

৮০ বছরের ভিক্ষুত্ব জীবনে বৃহত্তর বৌদ্ধ সমাজকে তিনি শুধু অকাতরে দিয়ে গেছেন। তিনি অসংখ্য বৌদ্ধ বিহার ও অনাথালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার কৃতকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ সমাজসেবায় একুশে পদকসহ দেশ-বিদেশে নানা স্বীকৃতি ও খেতাব পেয়েছেন জ্ঞানশ্রী মহাথের।

১৯৮১ সালে থাইল্যান্ড হতে ‘শাসনশোভন জ্ঞানভানক’ উপাধি, ২০০৪ সালে বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা কর্তৃক ‘উপ সংঘরাজ’ স্বীকৃতি লাভ করেন। পরে ২০০৬ সালে বার্মা সরকার কর্তৃক মহাসম্মজ্যোতিকাধ্বজ উপাধি, ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড এর মহাচুল্লালংকার বিশ্ববিদ্যালয় হতে সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ২০২০ সালের ২০ মে থেকে তিনি সংঘরাজ ভিক্ষু সহাসভার সর্বোচ্চ সম্মাননা মহামান্য ‘সংঘরাজ’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সমাজসেবায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘একুশে পদকে’ ভূষিত হন তিনি।

এছাড়া ড. জ্ঞানশ্রী মহাথেরো চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, জয়পুরহাটসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় অন্তত ৩০টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টার ও অনাথ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে বেশ সমাদৃত হয়েছেন।