পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সাথে ভাঙন দেখা দিয়েছে রাজবাড়ী গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া এলাকায়। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে ৭ নম্বর ঘাট এলাকায় প্রায় ২০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে দৌলতদিয়ার ৬ ও ৭ নম্বর ফেরিঘাটের পাশাপাশি ঘাট সংলগ্ন প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
ভাঙন কবলিত এলাকা স্থানীয় সংসদ সদস্য, বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পরিদর্শন করলেও ভাঙন রোধে নেওয়া হয় নাই কোনো ব্যবস্থা। ফলে ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকার পদ্মা পারের বাসিন্দারা।
প্রতিবছরই পদ্মার তীব্র ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা। এবারও প্রায় দেড় মাস আগে ৬ নম্বর ঘাট এলাকার প্রায় ৫০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। সে সময় বিআইডব্লিউটিএ বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করে। আর সাম্প্রতিক সময়ের ভাঙনে ৭ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার প্রায় ২শ মিটার এলাকায়জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি। জমিজমা, নগদ অর্থ না থাকায় পরিবার-পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে নদী পাড়ের পরিবারগুলো।
জানা গেছে, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ভাঙন রোধে কাজ করে বিআইডব্লিউটিএ এবং ঘাট ব্যাতিত অন্য এলাকায় কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত কয়েক বছর ধরে দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী নদী শাসনের কাজ শুরু হওয়ার কথা শোনা গেলেও আজ পর্যন্ত শুরু হয়নি প্রকল্পের কাজ। যার কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঘাট এলাকা। দৌলতদিয়া প্রান্তে ৭টি ফেরি ঘাট থাকলেও সচল রয়েছে মাত্র ৪টি ঘাট এবং পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে অন্য ৩টি ঘাট।
স্থানীয় সালাউদ্দিন মিয়া, মতিউর রহমান, মাজেদা বেগমসহ একাধিক বাসিন্দা বলেন, এই ভাঙন দীর্ঘ দিনের। তাদের মধ্যে কারও কারও এখন পর্যন্ত নদীতে ৩ থেকে ৭ বার বাড়ি ভেঙে নিয়েছে। সবশেষ দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ঘাটের পাশে চালাক পাড়ায় বসবাস শুরু করেন। এখানেও ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এলাকার মাঝামাঝি স্থানে ভাঙন শুরু হলেও ভাঙন রোধে কেউ কোন পদক্ষেপ নেয় নাই। শুধু মাত্র আশ্বাস দিয়ে দিনের পর দিন পার করছেন। কিছু দিনের ভাঙনে নদীতে তাদের বেশ কয়েকটি বাড়ি বিলীন হয়েছে । এখন এই এলাকার ফেরিঘাট এবং প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩শ বাড়ি ও একটি স্কুল হুমকিতে রয়েছে।
তারা আরও বলেন, এখানে এমপিসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিআইডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যান সহ অনেকে এসে দেখে যাবার এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত একটি বস্তা ফেলা হয় নাই এবং কারও কোন খবর নাই। ফেরির মাথা নদীর পাড়ে লাগাতে লাগাতে অনেক জায়গা ভেঙে গেল। ঘাটের এরিয়া পর্যন্ত তারা যে বস্তা ফেলবে সেটাও ফেলছে না।
তারা বলেন, দৌলতদিয়ায় বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘাট হলো ৭ নম্বর ঘাট। এই এলাকা ভাঙলে ৭নম্বর ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এই ৭ নম্বর ঘাট বন্ধ হলে ফেরি চলাচলই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ঘাট রক্ষার জন্য হলেও এই ৬ ও ৭ নম্বরের মাঝামাঝি স্থানের ভাঙন রোধ করা খুবই জরুরি। বস্তা ফেলা শুরু হলেও বিআইডব্লিউটিএর লোকজন ঠিকঠাক বস্তা ফেলে না। প্রকল্পের সময় অল্প কিছু বস্তা ফেলে।
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ভাঙন দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বিআইডব্লিউটিএ। ঘাট ব্যতীত অন্য সকল স্থানে কাজ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এই বর্ষায় তাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহম্মদ মোস্তফা বলেন, দৌলতদিয়ায় সরকারের বড় একটি পরিকল্পনা রয়েছে।
ইতোমধ্যে তারা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। প্রকল্পের প্রথম সমীক্ষার পর ঘাট ভাঙার কারণে নতুন করে আবার সমীক্ষা করা হয়েছে। যার কারণে প্রকল্পের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।