ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় তিন হাজার কৃষক বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে তারা মাঠে কোনো ফসল ফলাতে পারছেন না। তাছাড়া যারা অল্পকিছু ফসল ও সবজি বুনেছিলেন তারাও এবার ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে ২০০ একর ফসলি জমি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় প্রভাবশালী এক ব্যক্তি সরকারি জায়গা ভরাট করে খালের প্রবেশমুখ বন্ধ করার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু খালের পানিপ্রবাহের প্রবেশমুখই নয়, রেল ব্রিজ ও মহাসড়কের একটি ব্রিজের নিচে মাটি ফেলে ভরাট করার কারণে পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কৃষকেরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
এদিকে জলাবদ্ধতা মুক্ত করতে খাল পুনরুদ্ধার ও কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন পালন করেছে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি। গত রোববার (৩ আগস্ট) দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন পালন করে। পরে তারা জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর স্মারকলিপি দেন।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ, ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চাঁদপুর বারোখাদা, রসুলপুর, রুদ্রপাড়া এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বেশকিছু এলাকার ২ হাজার একর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব জমিতে ফসল ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় ৩ হাজার কৃষক। এসব জমিতে ধান, পাট, তিল, মরিচসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করা হতো।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের শিবরামপুর এলাকায় অবস্থিত আর এম জুট মিলের মালিক সড়ক বিভাগের অধীনে থাকা বড় একটি জায়গা দখল করে সেটি ভরাট করে ফেলে। ফলে উক্ত জমিসহ আশপাশের এলাকার পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি মহাসড়কের একটি ব্রিজের মুখও ভরাট করে ফেলে। এ ব্রিজের নিচ দিয়ে বিভিন্ন স্থানের পানি ভুবনেশ্বর নদ হয়ে কুমার নদে গিয়ে পড়তো। এটি বন্ধ হওয়ার কারণে অল্প বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় ফসলি জমিগুলো।
পশ্চিম চাঁদপুর গ্রামের কৃষক বক্কার শেখ, সেলিম শেখ ও মানু কাজী জানান, অল্প বৃষ্টিতেই তাদের জমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে তারা মাঠে কোনো ফসল ফলাতে পারেন না। দীর্ঘদিন এমন অবস্থা চললেও তারা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
কাকলী বেগম নামের এক কৃষাণি বলেন, আমি কয়েক বিঘা জমিতে পুঁইশাক ও মরিচ লাগিয়েছিলাম, পানিতে সব ডুবে গেছে। আমি এখন কীভাবে সংসার চালাবো। আমি ক্ষতিপূরণ চাই।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রভাবশালী মহলটি দীর্ঘদিন সরকারি খাল ভরাট করার কারণেই পানি বেরোনোর কোনো জায়গা নেই। ফসল ফলাতে না পেরে এ এলাকার ৩ হাজার কৃষক বর্তমানে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।
কৃষকরা জানান, গত কয়েকদিন আগে তারা এ বিষয়ে সবাইকে নিয়ে একটি সভা করেছেন। বিষয়টির কোনো সুরাহা না হলে তারা মহাসড়ক অবরোধ করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেবেন।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার কবির খান বাচ্চু বলেন, আর এম জুটমিলের মালিক সরকারি খাল ভরাট করার কারণেই আজকে ৩ হাজার কৃষক মরতে বসেছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় দরখাস্ত করলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমরা চাই, এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।
এ বিষয়ে আর এম জুট মিলের মালিক শাহিন শাহাবুদ্দিন মামুনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, একটি আবেদন পেয়েছি। এ বিষয়ে দ্রুত সমাধান যাতে করা যায়, সেই চেষ্টা করা হবে।