অল্প বয়সেই বাবাকে হারিয়ে জীবনে নেমে এসেছিল অন্ধকার। সংসারে অভাব-অনটন, চোখে জল আর মনে হাজারো কষ্ট। কিন্তু থেমে থাকেননি রাজবাড়ীর কালুখালীর ছেলে শরিফুল ইসলাম।
শৈশবে বাবার আদর না পেলেও মায়ের স্নেহ, ত্যাগ আর নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে সঙ্গী করে তিনি এগিয়ে গেছেন স্বপ্ন জয়ের পথে।
গ্রামের ছোট্ট স্কুল থেকে শুরু হওয়া সেই পথচলা আজ তাকে নিয়ে গেছে দেশের শীর্ষ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে। কালুখালী উপজেলার পুরাতন কালুখালী গ্রামের সন্তান শরিফুল আজ সবার অনুপ্রেরণা।
জানা গেছে, বাবা মৃত আব্দুর রব খান, মা রোকেয়া বেগম গৃহিণী। চার ভাইবোনের মধ্যে শরিফুল সবার ছোট। শৈশবেই বাবাকে হারিয়ে শুরু হয় দুঃসহ সংগ্রামের পথচলা। তবে সেই বেদনা আর অভাবই তাকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে প্রেরণা জুগিয়েছে।
প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন কালুখালীর আয়না আদর্শ একাডেমিতে। এরপর পাংশা জর্জ পাইলট মডেল স্কুল থেকে ২০১২ সালে এসএসসি এবং কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন তিনি।
চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন তার মনে জাগে নবম শ্রেণিতেই। কলেজ জীবনে সেই স্বপ্ন আরও প্রবল হয়ে ওঠে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে। ৫৬ ব্যাচের ছাত্র হিসেবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন এবং এক বছরের ইন্টার্নশিপ শেষে চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের পথে এগিয়ে যান।
২০২২ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এফসিপিএস পার্ট-১ (নিউরোমেডিসিন) উত্তীর্ণ হন শরিফুল। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে সম্প্রতি ৪৮তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
শৈশবের কষ্টের কথা স্মরণ করে ডা. শরিফুল ইসলাম বলেন, বাবাহারা হওয়ার কষ্ট আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ধাক্কা। কিন্তু সেই কষ্টই আমাকে লড়াই করতে শিখিয়েছে। আজকের সাফল্যের জন্য আমি মহান আল্লাহর রহমত, মায়ের ত্যাগ, শিক্ষক ও আত্মীয়-স্বজনের অবদান সর্বদা কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমি চাই একজন দক্ষ ও মানবিক চিকিৎসক হিসেবে কালুখালীবাসীর সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে।