হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর অল্প কিছুদিন পরেই শুরু হবে এ পূজা। দুর্গাপূজা ঘিরে রাজবাড়ীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা তৈরির কারিগররা। খড়, কাঠ, সুতা আর মাটি দিয়ে নিপুণ হাতে তৈরি করছেন প্রতিমা। পূজা যতই ঘনিয়ে আসছে, শিল্পীদের ব্যস্ততা ততটাই বাড়ছে।
রাজবাড়ী শহরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মণ্ডপে প্রতিমার মাটির কাজ শেষ হয়েছে। শুরু হয়ে গেছে রঙ ও সাজসজ্জার কাজ। দেবীকে সাজিয়ে তুলছে নতুন রূপে। প্রতিটি পূজামণ্ডপে দুর্গা, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, সিংহ, মহিষ, প্যাঁচা, হাঁস, সর্পসহ অন্যান্য প্রতিমা রঙের কাজ চলছে। রাত জেগে কাজ করছেন কারিগররা। মন্দিরে মন্দিরে চলছে ডেকোরেশনের কাজ।
শহরের বিনোদপুর শ্রী শ্রী সার্বজনীন শীতলা মন্দির (বারইপাড়া) গিয়ে দেখা যায়, প্রতিমা শিল্পী বিনোদ পাল রঙয়ের কাজ করছে।
তিনি বলেন, এ বছর রাজবাড়ীতেই ৬টি মন্দিরে কাজ পেয়েছি। এর মধ্যে ৩টি মন্দিরের রঙয়ের কাজ শেষ করে এই মন্দিরেরটা করছি। বাকি ২টি মন্দিরের রঙয়ের কাজ পূজার আগেই শেষ হয়ে যাবে। তবে সবকিছুর যে দাম, সেই হিসেবে আমরা মজুরি পাচ্ছি না।
জানা গেছে, রাজবাড়ীতে এ বছর ৪৩৮টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদরে (পৌরসভাসহ) ১০৯টি, গোয়ালন্দ উপজেলাতে (পৌরসভাসহ) ২৫টি, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১৪৯টি, কালুখালী উপজেলায় ৫৭টি, পাংশা উপজেলায় (পৌরসভা সহ) ৯৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পঞ্জিকা অনুযায়ী গত ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী, ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, ১ অক্টোবর নবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমীর মধ্যে দিয়ে ৫ দিনব্যাপী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
রাজবাড়ী পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অনিন্দিতা গুহ (বানী) বলেন, এ বছর আমাদের গুরুত্ব সহকারে সজাগ থাকতে হবে। এছাড়া প্রতিটা মন্দিরে সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। আমরা রাজবাড়ী পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সদস্যরা নিয়মিত মন্দির পরিদর্শন করছি।
রাজবাড়ী জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার দাস বলেন, পূজার সকল প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। চলতি বছরের ৪৩৮টি পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রত্যেকটি মণ্ডপে সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে ও মণ্ডপের পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে। আশা করছি, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই পূজা শেষ করতে পারবো আমরা।
নিরাপত্তা বিষয়ে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, হিন্দু ধর্মাবলম্বীর ভাইয়েরা তাদের ধর্মীয় উৎসব যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদযাপন করতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে। রাতে ও দিনে আমাদের টহল পুলিশ নিয়মিত ভিজিট করছে। পূজা নিয়ে যাতে গুজব না ছড়ায়, সেটা নিয়ে আমাদের একটি টিম কাজ করছে। উৎসব শুরু হলে প্রতিটি পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য আনসার, গ্রাম পুলিশ, পুলিশ মোতায়ন থাকবে। এছাড়া র্যাব ও সেনাবাহিনীসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে।
জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব পালনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়েও কঠোর নজরদারি থাকবে। আমি বিভিন্ন মন্দির নিয়মিত পরিদর্শন করছি। আমরা মন্দির কমিটির সাথে কথা বলেছি। আমরা আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। দুর্গাপূজায় যাতে সবার অংশগ্রহণ থাকে এবং শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়, তার জন্য যা প্রয়োজন সেটা প্রশাসন করবে।