ছবি তুলে মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা

বিকেল হলেই লেকপাড়ে প্রতিদিন দেখা মেলে ক্যামেরা হাতে এক যুবকের। লেকপাড়ে ঘুরতে আসা মানুষের ছবি তুলে আয় করেন তিনি। এতেই চলে ওই যুবকের সংসারের খরচ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার সাধুর ব্রীজ এলাকার রকিবুল ইসলামের ছেলে সেজান চৌধুরী (২৫) বেশ কিছুদিন বেকার ছিলেন। ভালো ব্যবসা করার পুঁজি নেই। চাকরি করারও সুযোগ নেই। দুই ভাইয়ের মধ্যে সেজান বড়। ছোট ভাই পড়াশোনা করেন।

প্রথমদিকে শখের বশেই ছবি তুলতেন তিনি। এরপর বেকারত্ব ঘোচাতে শখটাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। শহরের শকুনি লেকপাড়ে ঘুরতে আসা মানুষজনের ছবি তুলে আয় শুরু করেন।

প্রতিদিন বিকেল হলেই সেজান একটি ক্যামেরা নিয়ে লেকপাড়ে আসেন। লেকপাড়ে ঘুরতে আসা বিভিন্ন মানুষ ছবি তোলেন। প্রতিদিন তিনি গড়ে এক হাজার টাকার মতো আয় করেন। তবে প্রতি শুক্র ও শনিবার লেকপাড়ে মানুষজন বেশি হওয়ায় তার আয়ও বেশি হয়।

এছাড়াও অনেকেই বিয়ে, জন্মদিন, গায়ে হলুদসহ নানা অনুষ্ঠানে ছবি তোলার জন্য সেজানকে নিয়ে যান। এভাবেই তিনি মাদারীপুর শহরে একটু আলাদাভাবে টাকা আয় করছেন। সেই টাকায় চলছে সংসারের খরচ, আর ভাইয়ের পড়াশোনায় ব্যয়।

সেজান চৌধুরী বলেন, আমি এইচএসসি পাস করেছি। নানা কারণে আর পড়াশোনা করা হয়নি। প্রথমে শখের বশে ছবি তুলতাম। এখন সেটাকে কাজে লাগিয়ে আয় করছি। প্রথমে লেকপাড়ে দাড়িয়ে থাকলেও তেমন একটা সাড়া পাইনি। আস্তে আস্তে অনেক সাড়া পাচ্ছি। এখান এখানে ঘুরতে আসা অনেকেই আমার মাধ্যমে ছবি তুলেন। শুক্র ও শনিবার বেশি আয় হয়। মাসে আয় ৩০ হাজার টাকার মত। আশা করছি, পরিচিতি আরো বাড়লে সামনে আরো বেশি সফলতা পাবে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইমরান হাবিব বলেন, অনেকেই চাকরির পেছনে ঘুরে সময় নষ্ট করে। কিন্তু সেজান তা না করে নিজেই তৈরি করেছেন কর্মসংস্থান। এটা একটি ভালো দিক।

মাদারীপুর শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকার ফারহানা ইমু বলেন, কয়েকদিন আগে আমার ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের আগে একদিন দেখলাম এক যুবক ক্যামের হাতে লেকপাড়ের বিভিন্ন মানুষজনদের ছবি তুলে দিচ্ছেন। পরে আমার ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলার জন্য ৩ হাজার টাকায় তাকে ঠিক করি। তিনি অনেক সুন্দরভাবে ছবিগুলো তুলে দিয়েছেন। তাছাড়া মাদারীপুরের শকুনি লেকপাড়, সার্কিট হাউজ, নদীর পাড়ে ভাই ও ভাবীকে নিয়ে ছবি তুলিয়েছি। অনেক ভালো হয়েছে।

লেকপাড়ে ঘুরতে আসা সায়মা রহমান বলেন, আমি বন্ধুদের নিয়ে লেকপাড়ে ঘুরতে এসেছি। এসে দেখলাম এক যুবক এসএলআর ক্যামেরা নিয়ে দাড়িয়ে আছে। পরে তাকে নিয়ে আমি ও আমার বন্ধুরা ছবি তুলেছি। মোবাইল দিয়ে ছবি তুললে বেশি ভালো হয় না। যারা এই কাজে পারদর্শী, বিশেষ করে এসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি ভালো তুলতে পারেন, তাই ছবি তুলেছি। পরে ছবিগুলো যে-যার মোবাইলে নিয়েছে।

মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি এ্যাড. মাসুদ পারভেজ বলেন, কুয়াকাটা, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে ছবি তোলার জন্য ক্যামেরাম্যানদের দেখা যায়। কিন্তু আমাদের এই ছোট্ট শহর মাদারীপুরে এর আগে এমন দেখা যায়নি। এই প্রথম কেউ শকুনি লেকপাড়ে ক্যামেরা নিয়ে দাড়িয়ে থাকেন এবং ছবি তুলে দেন। আসলে এটা একটা আয়ের ভালো মাধ্যম। তাকে দেখে এই কাজে অনেকেই এগিয়ে আসবেন।