সাবেক রাষ্ট্রপতির বাড়ি এখন কিন্ডারগার্টেন স্কুল

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভৈরবপুর উত্তরপাড়া এলাকায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পৈতৃক বাড়িটি এখন কিন্ডারগার্টেন স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাড়িটি আইভি ভবন নামে পরিচিত। জিল্লুর রহমানের স্ত্রী মরহুম আইভি রহমানের স্মৃতি স্বরূপ ভবনটির নাম রাখা হয়েছিল। হঠাৎ এলাকাবাসী ও গণমাধ্যমকর্মীদের চোখে পড়ে সেই বাসভবনটি এখন কিন্ডারগার্ডেন স্কুল।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভবনটি সানফ্লাওয়ার কিন্ডারগার্টেন স্কুল কর্তৃপক্ষকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। জিল্লুর রহমানের বংশধর মরহুম তারা মিয়ার ছেলে নঈম আহমেদ এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পার্টনার। কিন্ডারগার্ডেন স্কুলটির মূল মালিক ভৈরবের প্রবীণ শিক্ষক অধ্যক্ষ আবদুল বাসেত। পাটনারের সহায়তায় বাসভবনটি ভাড়া নেওয়া হয়েছে। তবে নিচতলা ভাড়া নিয়ে স্কুল পরিচালনা করা হলেও দোতলা ভাড়া দেওয়া হয়নি। 
 
উল্লেখ্য, ভৈরবের কৃতি সন্তান জিল্লুর রহমান দেশ স্বাধীনতার পর ৫ বার কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসন থেকে সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি ২০০৯ সালে দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর তার একমাত্র ছেলে নাজমুল হাসান পাপন তার আসনে সংসদ সদস্য হন ৪ বার। পাপন বিসিবি সভাপতিও ছিলেন তখন। রাজনৈতিক কারণে পাপন মাঝে মধ্যে ভৈরবের পৈতৃক বাসায় আসা যাওয়া করতেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ঘটলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। সে সময় জিল্লুর রহমানের বাসভবনটিতে দুর্বত্তরা ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার দিন তার বাসভবনে কেউ ছিল না। 
 
রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে জিল্লুর রহমান ঢাকার গুলশানে নিজ বাসভবনে থাকতেন। এ কারণে তার পরিবারের সবাই গুলশানের বাসায় থাকতেন। একজন কেয়ারটেকার ভৈরবের বাসভবন দেখাশোনা করত।
 
৫ আগস্টের পর পাপনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। অনেকের ধারণা, পাপন সপরিবারে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। তার ভৈরবের বাসভবনটি ৫ আগস্ট বিকেলে দুর্বত্তরা ভাঙচুর-লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করলে প্রায় এক বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এরপর আর ভবনটি সংস্কার করা হয়নি। বাসার প্রধান গেইটটি তালাবদ্ধ থাকত। অনেক উৎসুক মানুষ বাইরে থেকে পরিত্যক্ত বাড়িটি দেখত।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) কথা হয় কিন্ডারগার্ডেন মালিক অধ্যক্ষ আবদুল বাসেতের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার স্কুলটি ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত। তখন জিল্লুর রহমানের চাচাত ভাই তারা মিয়া আমার পার্টনার ছিল। তিনি মারা গেছেন। এখন তার ছেলে নঈম পার্টনার হিসেবে আমার সাথে আছেন। নঈম জিল্লুর রহমানের ওয়ারিশের কারো সাথে আলাপ করে বাড়িটি ভাড়ার ব্যবস্থা করে দেয়। 
 
 
অধ্যক্ষ আবদুল বাসেতে আরও বলেন, ভৈরবের কৃতি সন্তান জিল্লুর রহমান ছিলেন অহিংসু নেতা। তিনি কারো ক্ষতি করেছেন বলে আমার জানা নেই। ৫ আগস্টের পর বাসভবনটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করে দুর্বত্তরা। বাসভবনটির সংস্কার করতে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকা আমি ভাড়া থেকে কেটে নেব। সেভাবেই কথা হয়েছে। তবে আমি নিচতলা ভাড়া নিলেও দোতলা ভাড়া নেইনি। বাসভবনটি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় এখন ভাল থাকবে। আমিও একটি ভাল বাড়ি পেলাম ভাড়া হিসেবে। এ কারণে আমি ভবনটি স্কুলের জন্য ভাড়া নিয়েছি। 
 
এ বিষয়ে স্কুলের পার্টনার নঈম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া জিল্লুর রহমানের পরিবারের কাউকেও পাওয়া যায়নি।