ফরিদপুরের ভাঙ্গায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মানিকদাহ ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া মানবপাচারকে কেন্দ্র করে ঘারুয়া ইউনিয়নের হাজরাকান্দা গ্ৰামে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় কমপক্ষে ৪০ জন গ্ৰামবাসী আহত হয়েছেন।
শনিবার (২২ নভেম্বর) সকালে মানিকদাহ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান বাচ্চু মাতুব্বরের সাথে সাবেক চেয়ারম্যান সাঈদ মিয়ার পূর্ব শত্রুতার জেরে দুই চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির পর হাতাহাতি হয়।
এর সূত্র ধরে আদমপুর গ্ৰামবাসী সকাল থেকেই দেশীয় অস্ত্র- ঢাল, সরকি, কালি, ইটপাটকেল নিয়ে একে অপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে বাড়িঘর, দোকানপাট ভাঙচুরসহ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষে ১৫ গ্ৰামবাসী আহত হন। আহতদের ভাঙ্গা ও সদরপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
অপরদিকে, ঘারুয়া ইউনিয়নের হাজরাকান্দি গ্ৰামে ইতালীতে নেওয়ার কথা বলে ৩০ জন যুবককে লিবিয়ায় আটকে রাখাকে কেন্দ্র করে মানবপাচারকারী দালালদের পক্ষের জুলহাস মেম্বারের সাথে ভুক্তভোগীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ইতালিতে পাঠানো মানবপাচারকারী দালাল নুর আলম ও তার ভাই রুহুল আমিনকে ভুক্তভোগীরা আটক করে। এ সময় মানবপাচারকারীর দল ও ভুক্তভোগীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে। এ ঘটনায় নারী-পুরুষসহ কমপক্ষে ২৫ জন গ্ৰামবাসী আহত হন। আহতদের ভাঙ্গা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, লিবিয়া হয়ে ইতালি নেওয়ার কথা বলে মানবপাচারকারী চক্রের ২ সদস্য নুর আলম ও রুহুল আমিন মিলে ভাঙ্গা ও রাজৈর এলাকা থেকে ৩০/৩৫ জন যুবকের কাছ থেকে ৬/৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এরপর ওই তারা ইতালির কথা বলে এসব যুবকদের লিবিয়া নিয়ে মাফিয়াদের হাতে আটকে রাখে। এ খবর পেয়ে ওইসব যুবকদের পরিবারের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। বাংলাদেশি ওই যুবকদের লিবিয়ায় আটকে রেখে পুনরায় ১০ লাখ করে টাকা দাবি করে দালালচক্র।
সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে ভুক্তভোগীরা নুর আলম ও রুহুলকে পুনরায় টাকা তুলে দেয়। টাকা পেয়ে দালালচক্র গা ঢাকা দেয়। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে মানবপাচারকারীর সদস্য নুর আলম হাজরাকান্দা গ্রামের নিজ বাড়িতে আসেছেন। এমন সংবাদ পেয়ে ভুক্তভোগীদের স্বজনরা রুহুল আমিনের বাড়ি যায়।
তখন জুলহাস মেম্বারের দলের লোকজন মানবপাচারকারী দালাল নুর আলম ও রুহুল আমিনের পক্ষ নিয়ে ভুক্তভোগী মিরাজ, মামুন ও সম্রাটসহ বেশ কয়েকজনকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরে স্থানীয় জনতা তাদের উদ্ধার করে ভাঙ্গা ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীদের সাথে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে জুলহাস মেম্বারের দলের লোকজনের উপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে উভয়পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষে নারী-পুরুষ সহ ২৫ জন লোক আহত হয়। খবর পেয়ে ভাঙ্গা থানা পুলিশ ঘটনস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফ হোসেন বলেন, ঘারুয়া ইউনিয়নের হাজরাকান্দা গ্রামে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। কোন পক্ষের অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে মানিকদাহ ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যানের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। এখন দুই জায়গাতেই পরিবেশ শান্ত আছে।