মেহেরপুরে চাহিদার দ্বিগুণ গবাদি পশু, দাম নিয়ে হতাশ

মেহেরপুর জেলায় অন্যান্য বছরের মত এবছরেও চাহিদার দ্বিগুণ কোরবানি উপযোগী গবাদি পশু মজুদ থাকলেও বেচা বিক্রি না থাকায় হতাশায় দিন পার করছেন খামারিরা। পশু পালনে প্রতিনিয়িত খাদ্যপন্যের দাম বাড়লেও এবছর গরুর দাম কম। বাইরের ব্যবসায়ীরাও আসছেন না পশু হাটে। জেলার বাড়িতে বাড়িতে বিক্রিযোগ্য গরু থাকলেও নেই ক্রেতা। ফলে গরু মোটাতাজা করে লোকসান হবে বলছেন খামারিরা। তবে, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর বলছেন, এখনও সময় আছে খামারিদের হতাশার কিছু নেই, লাভবান হবেন তারা।

আর মাত্র কদিন পরই কোরবানির ঈদ। আর এ উপলক্ষে জমতে শুরু করেছে মেহেরপুরের কোরবানির পশু হাট। বিভিন্ন জাতের ছোট বড় গরু উঠতে শুরু করেছে পশুহাটে। জেলার পারিবারিক খামারিদের গোয়ালেও রয়েছে ছোট বড় ও মাঝারি আকৃতির গরু। এবছর কোরবানির জন্য গরুর চেয়ে ছাগলের জাহিদা বেশি। 

রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে আসছেন গরুর ব্যাপারীরা। পর্যাপ্ত পশু আমদানি হচ্ছে আর ক্রেতারাও ভিড় করছেন। তবে এখনো বেচা কেনা জমে উঠেনি। ক্রেতারা আসছেন দেখছেন আর চলে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি বুঝে দুয়েকজন কিনছেন। তবে আরও কয়েকদিন পর বেচা কেনা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বেপারীরা। অন্যদিকে দেশে পর্যাপ্ত গরু আছে দাবি করে বাইরে থেকে গরু আমদানি না করতে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ব্যাপারী ও খামারীরা।

জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মতে, মেহরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী এ তিনটি উপজেলায় হৃষ্ট, পুষ্টকরণ কোরবানিযোগ্য মোট গবাদি পশুর সংখ্যা ১ লাখ ৯০ হাজার ৮৩৮টি। এর মধ্যে গরু ৫৯ হজার ২২০টি, মহিষ রয়েছে ৫৪৪টি, ছাগল ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০টি এবং ভেড়া রয়েছে ২ হাজার ৯২৯টি। যা জেলার চাহিদার জন্য প্রয়োজন হবে ৯০ হাজার পশু। উদ্বৃত্ত থাকবে লক্ষাধিক গবাদি পশু। উদ্বৃত্ত গবাদি পশু বিক্রি হয়ে থাকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে।

জেলার বড় গরু খামারী গাংনী পৌর মেয়র আহমেদ আলী বলেন, আমার খামারে দেড় শতাধিক গরু বিক্রিযোগ্য হয়েছে। সম্পুর্ন পাকৃতিক উপায়ে গরু লালন পালন করেছি। খড়, ভুষি, ছোলা, কাঁচা ঘাস ও কলাইয়ের খোসা খাওয়ানো হয়। প্রতিদিন খামারের গরুর পরিচর্যায় রাখা হয়েছে ৯ জন শ্রমিক। অন্যান্য বছরে কোরবানির আগে গরু বিক্রি করে খরচ বাদ দয়ে কিছু টাকা লাভ হয়। কিন্তু এবছর গরুর চাহিদা কম। দামেও পোষাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি করতে পারিনি।

পারিবারিক খামারী ভাটপাড়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগে আমি একটি ফিজিয়ান জাতের বাছুর গরু কিনে ছিলাম। ধানের বিচালি, খড়, গমের ভুষি, ছোলা, কাঁচা ঘাস ইত্যাদি খাইয়ে গরুটিকে মোটাতাজা করেছিলাম। গরুটি মোটাতাজা করতে বিভিন্ন দোকান থেকে ধার দেনা করতে হয়েছে। সামনে কোরবানির ঈদ। দোকানের বাকি পরিশোধ করতে হবে। গরুটি বিক্রি করার জন্য ভালো ক্রেতা পাচ্ছিলাম না। অবশেষে অল্প দামেই গরুটি বিক্রি করতে হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়নি।

খামারি হাফিজুল ইসলাম জানান, আমার বাড়িতে দুটি মোটা গরু রয়েছে। বিক্রি করার চেষ্টা করেও আজও বিক্রি করতে পারিনি। 

এমন কথা জানালেন গৃহবধূ হানুফা খাতুনও। তিনি জানান, ঈদের বাজারে লাভে বিক্রি করবো বলে গরু মোটাতাজা করেছি। এখন পর্যন্ত ব্যাপারী বা দালাল পাইনি। দু-একজন ব্যাপরী এসে তাদের মনগড়া দাম বলে চলে যাচ্ছেন। ব্যাপারীদের হাকা দামে গরু বিক্রি কররে খরচের টাকা উঠবেনা।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বড় পশু হাটের একটি হচ্ছে মেহেরপুরের বামুন্দি পশু হাট। সরেজমিনে পশুহাটটি ঘুরে দেখা গেছে, আশপাশের জেলা থেকেও গরু নিয়ে বাজারে এসেছেন পারিবারিক খামারীসহ ব্যাপারীরা। গরু নিয়ে ঠাঁই দাঁড়ায়ে আছেন তারা। কয়েকজন আসছেন আর দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। তবে বিক্রি নেই। 

কথা হয় স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী কুষ্টিয়ার আমলা সদরপুরের লাল খানের সাথে তিনি বলেন, বর্তমান হাটে গরু আছে পর্যাপ্ত কিন্তু ক্রেতা নেই। অন্যান্য বছরে বিভিন্ন জেলা থেকে গরু কিনতে বড়বড় ব্যবসায়ীরা আসতেন গরু কিনে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যেতেন। কিন্তু এবছর সে সকল ব্যপারীরা এখন পর্যন্ত আসেনি। আমরা কয়েকটি হাট গরু নিয়ে আসছি, বিক্রি করতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। 

মেহেরপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হারিছুল আবিদ বলেন, মেহেরপুর জেলা একটি প্রাণী সম্পদ সমৃদ্ধ জেলা। জেলার খামারিরা প্রাকৃতিক খাবার যেমন ধানের খড়, গমের ভুষি, ছোলা এবং কাঁচা ঘাস খাইয়ে গবাদি পশু বড় করে থাকেন। এ জেলার গবাদি পশুর চাহিদা দেশ জুড়ে। জেলায় প্রায় দুইলক্ষাধিক গবাদি পশু কোরবানিযোগ্য হয়েছে। যা জেলার চাহিদার দ্বিগুণ। আশা করছি খামারীরা তাদের পালনকৃত পশুর ন্যায্যমূল্য পাবে।