অতিমাত্রায় আগাছা নাশক প্রয়োগ, পুড়েছে দেড়শ বিঘা ধান

মেহেরপুর গাংনীর চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারের যুগ্ম পরিচালকের অদক্ষতায় অতিমাত্রায় আগাছা নাশক প্রয়োগ করে পুড়িয়ে মারা হয়েছে প্রায় দেড়শ বিঘা জমির ধান। এতে সরকার হারাচ্ছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। হুমকির মুখে ধান বীজ উৎপাদন। তবে কেন অতিমাত্রায় আগাছা নাশক প্রয়োগ করা হয়েছে, তার জবাব নেই খামারের যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলামের কাছে।

আগাছা নাশক স্প্রে করা শ্রমিকরা বলছেন, জেডি স্যারের ব্যক্তিগত লোক বিষ সরবরাহ করেন, আর আমরা শুধু ফসলে স্প্রে করি।

সোমবার (৮ জুলাই) সকালে সরেজমিনে চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ ধানের মাঠ এখন সবুজের পরিবর্তে হলুদ হয়ে গেছে। পঁচে গেছে ধানের গোড়া। পুড়ে গেছে ধানের সব পাতা ও কাণ্ড।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চিৎলা ভিত্তি পাট বীজ খামারে ১২০ একর জমিতে ব্রী ২১ ও ব্রী ৭২ উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে প্রায় একমাস আগে। ধান রোপণের পর ধানের জমিতে আগাছা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

খামারের যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলামের একান্ত কাছের লোক নাজিম উদ্দিন ধানের জমিতে কীটনাশক ও আগাছা নাশক প্রয়োগ করার জন্য কর্মরত শ্রমিকদের নির্দেশ দেন। নাজিম উদ্দিন নিজেই কীটনাশক বালতিতে ভরে শ্রমিকদের কাছে দেন। চলতি মাসের ২ তারিখে শ্রমিকরা ধানক্ষেতে কীটনাশক প্রয়োগ করেন। কীটনাশক প্রয়োগের কয়েক দিনের মধ্যেই ধানের চারা গাছ গুলো মরতে শুরু করে। 

তবে কি ধরনের কীটনাশক ও আগাছা নাশক ব্যবহার করা হয়েছে এ ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি কর্মরত শ্রমিকদের। 

জানা গেছে, নিম্নমানের কীটনাশক ও সার, যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত শ্রমিক নাজিম উদ্দিনের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গার একটি দোকান থেকে নিয়ে আসেন। নিম্নমানের কোম্পানিরর সার ও কীটনাশক ব্যবহার করায় এই খামারে দিন দিন ফসলের ফলন কমেছে।

এই ব্যাপারে যুগ্ম পরিচালক মোরশেদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ৩টি ব্লকের ধানগাছ পুড়ে গেছে বলে আমি জানতে পেরেছি। জমির আইলে এখনো যাওয়া হয়নি। উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি করা হবে। তারপর আমরা কারণ নির্ধারণ করতে পারবো। 

তিনি আরও বলেন, আমার ডিপার্টমেন্ট সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।

খামারে কর্মরত শ্রমিক সর্দার আব্দুল মান্নান বলেন, ধানের জমিতে অনেক আগাছা জন্মায়, তাই নাজিম উদ্দিন তাদেরকে কীটনাশক প্রয়োগ করতে বলেন। সেই কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে জমির ধান গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। জমিতে কতটুকু কীটনাশক দিতে হবে নাজিম উদ্দীন আমাদের বলে দিয়েছেন। সে মতে জমিতে কীটনাশক স্প্রে করা হয়েছে।

মাস্টার রোলের শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের যুগ্ম পরিচালক স্যারের লোক নাজিম উদ্দীন কীটনাশক পানির সাথে মিশিয়ে দেন। আমরা তার নির্দেশমত জমিতে স্প্রে করি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিকরা জানান, জমির ধান মরে যাওয়া শুরু হলে ওই কীটনাশকের বোতলের আলামত নষ্ট করার জন্য তড়িঘড়ি করে নাজিম উদ্দিন বোতলগুলো পুড়িয়ে ফেলেন। 

তাদের মতে, যুগ্ম পরিচালক মোর্শেদুল ইসলামের একান্ত কাছের লোক নাজিম উদ্দিনের দেওয়া নিম্নমানের কীটনাশকের থাবায় মাঠের পর মাঠের এই ধান পুড়ে গেছে।

শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, নাজিম উদ্দিনের অনুমতি ব্যতীত কোনো কাজ করতে পারেন না শ্রমিক ও খামারের উপসহকারী কর্মকর্তারা (ডিএডি)। 

শ্রমিকরা বলেন, বিনা কারণে শ্রমিক ছাঁটাই করতে শুরু করেছেন সহকারী পরিচালক স্যার। এ নিয়ে শ্রমিকরা মানববন্ধন করেছেন। শ্রমিকদের হয়রানি করতে জেডি স্যারের ভাড়াটে লোক নাজিমুদ্দিন ও সাহাদতকে দিয়ে আগাছানাশক মেশিনের মধ্যে মিশিয়ে দেয়। কীটনাশক বা আগাছা নাশকের বোতল বা মোড়ক আমাদের দেখানো হয়না। কি ধরনের আগাছা নাশক মিশিয়েছেন তা জেডি স্যার, নাজিমুদ্দিন ও সাহাদত ছাড়া আর কেউ জানেনা।

নাজিমুদ্দিন এই খামারের যুগ্ম পরিচালকের নিকট আত্মীয় পরিচয় নিয়ে কাজ করেন। এখন ফার্মের সকল কার্যক্রম চলছে যুগ্ম পরিচালকের একান্ত কাছের লোক শ্রমিক নাজিম উদ্দীনের নির্দেশে।

গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেনের কাছে সংগৃহীত আলামত নিয়ে গেলে তিনি বলেন, এগুলো আগাছা নাশক। এসব মানের আগাছানাশক বা কীটনাশক জমিতে বেশি ব্যবহার করলে ধান গাছের গোড়ায় ধীরে ধীরে পচন ধরবে। মরে যাবে ধানের ক্ষেত।