কুষ্টিয়ায় নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (১৫ জুন) দিবাগত রাত ১টার দিকে সদর উপজেলার আব্দালপুর ইউনিয়নের পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
অপহরণের শিকার ওই ব্যবসায়ীর নাম মো. জাহাবক্স (৩৮)। তিনি একই এলাকার মৃত কুদ্দুস আলীর ছেলে। বাড়ির পাশেই প্রান্ত স্টোর নামের একটি পাইকারি মুদির দোকান রয়েছে। তিনি দোকানটি পরিচালনা করতেন।
ঘটনাস্থল থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা একটি চিঠি পাওয়া গেছে। এরপরে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ ও পরিবার। চিঠিতে পাঁচ দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট ঠিকানায় টাকা না পৌঁছালে মরদেহ গুম করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় নিজ বাড়ির সামনে থেকে আব্দালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলী হায়দার স্বপনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া চিঠিতে লেখা রয়েছে, আমরা দোকানদারকে তুলিয়ে নিয়ে গেলাম। ৫ দিনের ভেতরে ১৫ লাখ টাকা গুছিয়ে, আমরা এর ভিতরে ঠিকানা লিখে পাঠাবো, যেন ঠিকানায় একা যেয়ে টাকা দিবে, ওকে যেখান থেকে এনেছি সেখানে পৌঁছে দিব। আর যদি পুলিশ বা কোনো লোককে জানানো হয় বা বলা হয়, তাহলে টাকা দিয়েও কাজ হবে না, জীবনে খোঁজ পাবে না। তাই সাবধান জানাজানি করবে না। আমরা ভালোভাবে পৌঁছে দিব। কোনো চালাকি করলে লাশও পাবে না। ৫ দিন পার হয়ে গেলে আর খোঁজ পাবে না।
জাহাবক্সের স্ত্রী সাথী খাতুন বলেন, আমরা সবাই ঘুমাচ্ছিলাম। রাত ১টার দিকে অপরিচিত একজন ব্যক্তি স্যালাইন কেনার জন্য স্বামীকে ডাক দেন। তিনি দোকান খুলে স্যালাইন দেওয়ার জন্য বাইরে যান। বেশ কিছু সময় পার হলেও তিনি ফিরে না আসায় তাকে খুঁজতে ঘরের দরজা খুলতে গেলে বুঝতে পারি বাইরে থেকে ছিটকিনি আটকানো। এ সময় আমার চিৎকারে শাশুড়ি এসে ছিটকিনি খুলে দেন। সঙ্গে সঙ্গে দোকানে গিয়ে আমার স্বামীকে আর পাইনি। দোকানের তালা খোলা ছিল এবং ক্যাশবাক্সও খালি ছিল। এ সময় দোকানের বাইরে বেঞ্চের ওপর আঠা দিয়ে আটকানো খামের মধ্যে একটি চিঠি পাই। চিঠিতে পাঁচ দিনের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে। টাকা না দিলে আর পুলিশকে বললে লাশ পাব না লিখেছে।
জাহাবক্সের ছেলে প্রান্ত বলেন, আমার ঘরের দরজাও বাইরে থেকে আটকানো ছিল। বাইরে বেড়িয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাবার ফোনে কল দিয়ে বন্ধ পাই। আজ সোমবার দোকানে হালখাতা ছিল। অন্য দোকানিরা যারা সপ্তাহে বাকি পরিশোধ করতেন, তারাও টাকা দিয়ে গিয়েছিলেন। আনুমানিক চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ক্যাশবাক্সের নিচে রাখা ছিল। সে টাকাও পাওয়া যায়নি। আমরা পুলিশকে জানিয়েছে। পুলিশ বাবাকে খুঁজছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অপহৃত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। তা ছাড়া উদ্ধার হওয়া চিঠি যাচাই-বাছাই করে ধারণা করা হচ্ছে, ওই ব্যবসায়ী অপহৃত হয়েছেন। তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়েছে।