সাতক্ষীরায় অসময়ের তরমুজে ভাগ্য বদলাচ্ছে কৃষকের 

দূর থেকে দেখলে মনে হবে সবুজ পাতার ছায়ায় ঝুলছে রঙিন ফলের মালা। কাছে গেলে বোঝা যায়, এগুলো অসময়ের তরমুজ। নিচে মিঠে ও লোনা পানির মিশ্র ঘেরে মাছের খেলা। ওপরে মাচায় ঝুলছে সুপ্রিম হানি, তৃপ্তি, ব্ল্যাক বেবি, সুগারকুইন আর বাংলা লিংকের তরমুজ। এ মন ভোলানো দৃশ্য এখন সাতক্ষীরার দেবহাটার কৃষি মাঠে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

কয়েক বছর আগেও দেবহাটার মৎস্য ঘেরের বেড়িগুলো ছিল অব্যবহৃত, নয়তো আগাছায় ভরা। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সেই বেড়িগুলোতে শুরু হয় পরীক্ষামূলক তরমুজ চাষ। প্রথমে অনেকে সন্দিহান ছিলেন, লোনা পানির প্রভাবে কি তরমুজ হবে? তবে প্রথম ফসলেই মিললো সাফল্য। সেই সাফল্য ছড়িয়ে পড়লো আশপাশের গ্রামগুলোতে।

সাতক্ষীরা জেলার দেবহাটা উপজেলা কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর প্রায় ৫০ জন কৃষক এ চাষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আলাদা জমির দরকার নেই। মাছের ঘেরের বেড়ি আর সামান্য জমিই যথেষ্ট। ফলে বিনিয়োগ কম, ঝুঁকি কম আর লাভ অনেক।

এখন বাজারে কেজিপ্রতি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা দরে। মৌসুমের বাইরে এত দাম পাওয়ায় কৃষকদের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। উপজেলার তিনটি প্রদর্শনী প্লটে এরই মধ্যে বাম্পার ফলন এসেছে। কৃষি বিভাগ থেকে উন্নত জাতের বীজ ও সার সরবরাহ করা হয়েছে। যার মধ্যে সুপ্রিম হানি, তৃপ্তি, ব্ল্যাক বেবি, সুগারকুইন ও বাংলা লিংক আছে।

টিকেট গ্রামের চাষি বিশ্বনাথ টাপালী দৈনিক খবর সংযোগ বলেন, ‘লোনা এলাকায় টিউবওয়েলের পানি বালতিতে করে এনে প্রতিদিন গাছে পানি দিই, রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ করি। কষ্ট অনেক কিন্তু লাভ বেশি ফল ও মিষ্টি। প্রথম চালানেই ৪০ হাজার টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। খরচ কম। আরও ২ দফা তোলা বাকি।’

কৃষক আবুল কাশেমের অভিজ্ঞতা আরও উজ্জ্বল। তিনি বলেন, ‘তরমুজ দেখতে সুন্দর, খেতেও অসাধারণ মিষ্টি। বাজারে চাহিদা প্রচুর। আশা করছি, প্রায় ২ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবো।’

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘লোনাতে সোনার খোঁজে কাজ করছি আমরা। প্রথমে কৃষকদের আগ্রহ কম ছিল। এখন নিজেরাই এসে বীজ চাইছেন।’

দেবহাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান বলেন, ‘যেখানে আগে বেড়ি পতিত থাকতো; সেখানে এখন ফসল হচ্ছে। এতে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে। কৃষকের আয় বাড়ছে আর স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে।’

দেবহাটার অসময়ের তরমুজ চাষ শুধু কৃষকের ভাগ্যই বদলাচ্ছে না, পতিত জমি ও লোনা পানি নিয়েও কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিচ্ছে। হয়তো কয়েক বছরের মধ্যে এ মডেল সাতক্ষীরা ছাড়িয়ে দেশের অন্য উপকূলীয় অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়বে।