বসতভিটা রক্ষায় জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চান ৪ শতাধিক পরিবার

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ থানার বাজারগ্রাম মৌজায় বসবাসরত দীর্ঘদিনের স্থায়ী অধিবাসীরা তাদের বসতভিটা রক্ষায় জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) জমি হিসেবে দাবি করা ওই এলাকায় বর্তমানে প্রায় ৪ শতাধিক হতদরিদ্র পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বসবাস করছে। উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে মাইকিং করায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
 
এ পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে ইদ্রীস আলীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্বারকলিপি জমা দিয়েছেন।
 
 
স্বারকলিপিতে তারা দাবি করেন, ১৯৬২ সালের এসএ খতিয়ানে এই জমির মালিক তারা। পরবর্তীতে ১৯৬৪-৬৫ সালে সওজ জমি অধিগ্রহণ করলেও কোনো ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করেনি। মাঠ জরিপে ৩০ ধারায় এবং পরে বিআরএস খতিয়ানেও অনেকের নামে রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। তবে কিছু রেকর্ড না পাওয়ায় বর্তমানে ৮৬/২২ নম্বর দেওয়ানি মামলা বিজ্ঞ আদালতে চলমান রয়েছে।
 
স্বারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, ওই জমিতে তারা প্রায় ১১০ বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন। এলাকার পরিবারগুলো নিজেদের জমিতে বাড়ি নির্মাণ করেছেন, রয়েছে পূর্বপুরুষ ও আত্মীয়দের কবরস্থানের অবস্থানও। সওজ গত ৬০ বছরেও কখনো উচ্ছেদের চেষ্টা না করলেও এখন হঠাৎ উচ্ছেদের ঘোষণা তাদের জীবনকে অনিশ্চয়তায় ফেলেছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
 
ইদ্রীস আলী বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই, আমরা রাস্তা চাই। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত জমি যেন না নেওয়া হয়।
 
তিনি দাবি করেন, চলমান উচ্ছেদ কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমাপনী পরীক্ষার ঠিক আগে শুরু হওয়ায় শত শত শিশুর পড়াশোনা হুমকির মুখে পড়বে।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, ৪ শতাধিক পরিবারের মধ্যে বেশিরভাগই নিম্নআয়ের শ্রমজীবী, দিনমজুর ও কৃষক। তাদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। অনেক পরিবারে বৃদ্ধ বাবা-মা, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অসহায় নারী-শিশু রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এখন উচ্ছেদ হলে তারা মানবেতর অবস্থায় পড়বেন।
 
বাসিন্দারা দাবি করেন, সড়ক নির্মাণের জন্য যতটুকু সত্যিকার প্রয়োজন ততটুকু জমি নিয়ে কাজ করা যেতে পারে। কিন্তু পুরো বসতভিটা উচ্ছেদ করলে বহু মানুষের জীবিকা, শিক্ষা, সামাজিক ও ধর্মীয় আবাসন কেন্দ্র সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
 
স্বারকলিপিতে তারা জেলা প্রশাসকসহ মন্ত্রী পরিষদ সচিব, সওজের প্রধান প্রকৌশলী, জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) কালিগঞ্জের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এর আগে মানববন্ধন করেন কয়েকশ পরিবারের সদস্যরা।