শ্যামনগরে বুনো শাক রান্না ও খাদ্য উৎসব

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে অনুষ্ঠিত হয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী বুনো শাকের রান্না প্রতিযোগিতা ও খাদ্য উৎসব। সোমবার (২৪ নভেম্বর) প্রকৃতিতে প্রাপ্ত উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম জেলেখালী কৃষি প্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্রে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় উপকূলীয় গ্রামীণ নারী ও পুরুষেরা অংশ নেন।  

সবুজ সংহতি, স্থানীয় জনসংগঠন ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় পশ্চিম জেলেখালী গ্রামের স্থানীয় ৫টি জনসংগঠনের ১৬ জন নারী ও পুরুষ বাড়ির আঙিনা, খাল-বিল, জলাশয় থেকে কুড়িয়ে এনে কচুশাক, মাটিফোড়া, ডুমুর, বুনো আমড়া, কলমিশাক, থানকুনি, শাপলা, কলার মোচা, আদাবরুন, কলার থোড়, কচুশাক, কাটানুটে, ঘুমশাক, তেলাকচু, আমরুল ও মিশ্রিত শাক রান্না করে পরিবেশন (প্রত্যেকে একটি করে) করেন।
 
 
নির্ধারিত সময়ে রান্না শেষে চলে স্বাদ গ্রহণ কর্মসূচি। অংশগ্রহণকারীরা তাদের রান্নার প্রধান উপকরণ বুনো শাক সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। এরপর ৭ সদস্যের বিচারকমণ্ডলী স্বাদ-পুষ্টিগুণ ও উপস্থাপনার উপর ভিত্তি করে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।
 
এতে বুনো আমড়া রান্না করে প্রথম স্থান অধিকার করেন যুব কৃষক প্রশান্ত নস্কর, কলমি শাক রান্না করে দ্বিতীয় হন শিক্ষার্থী জবা ও থানকুনি রান্না করে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন কৃষাণী ঝরনা রানী মন্ডল।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়ন সবুজ সংহতির সভাপতি ডা. যোগেশ মন্ডল। বক্তব্য রাখেন স্থানীয় ইউপি সদস্য দেবাশীষ গায়েন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুম বিল্লাহ, শিক্ষক হেমা রানী, কৃষাণী অল্পনা রানী মিস্ত্রি, লতা রানী, শিক্ষার্থী অনন্যা ও ধৃতিমা, কৃষক ভুধর চন্দ্র মন্ডল, বারসিক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মন্ডল ও মারুফ হোসেন মিলন।
 

তারা বলেন, প্রকৃতিতে প্রাপ্ত উদ্ভিদ-প্রাণবৈচিত্র্য মানুষ ও প্রাণীর খাদ্য এবং ওষুধ হিসাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অবাধ ব্যবহার এবং মনুষ্য বসতি স্থাপনের ফলে এ সকল উদ্ভিদ বৈচিত্র্য এবং তার প্রাপ্তিস্থান হারিয়ে যাচ্ছে, যা গ্রামীণ মানুষের পুষ্টির অন্যতম উৎস ও খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখে। তাই সকলকেই এগুলো সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিতে হবে। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।
 
ডা. যোগেশ মন্ডল বলেন, এই রান্না প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রকৃতির সকল উদ্ভিদবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ব্যবহার ও বিকাশের জন্য নতুন প্রজন্মের সাথে গ্রামীণ নারীদের সেতু বন্ধন তৈরি হচ্ছে। এর মাধ্যমে লোকায়ত জ্ঞান প্রসারিত হবে, যা সকল প্রাণের খাদ্য নিরাপত্তায় ভূমিকা রাখবে।