প্রবাসী ছেলের সন্ধানে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অহায় এক পিতা মো. সফির উদ্দিন। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাচিনা ইউনিয়নের কাচিনা গ্রামে। ৬ মাস ধরে তিনি ছেলের কোন সন্ধান পাচ্ছেন না।
পবিরার সূত্রে জানা যায়, মো. সফির উদ্দিনের ছেলে সোহরাব হোসাইন (৩৫) ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই কাজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরবে যায়। তার পাসপোর্ট নম্বর EJ0433614. এবং মোবাইল ফোন নম্বর 009660532847732. সেখানে সে ‘তানিয়া আল খাইজ ওয়াটর’ নামের কোম্পানিতে কর্মরত। গত ২০২১ সালে তিনি একবার দেশে আসেন এবং প্রায় ৬ মাস অবস্থান করে পুনরায় সৌদিতে চলে যায়।
এদিকে, গত রমজানের এক-দেড় মাস আগে মায়ের সাথে তার কথা হয়। ওই সময় তিনি ভালো আছেন এবং কিছু টাকা পাঠিয়েছেন বলে তার মাকে জানান। তিনি তার মাকে ওই টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করতে বলেন। এরপর ছেলের সাথে তাদের আর কোন যোগাযোগ নেই। ছেলের সন্ধানে তার বাবা অনেক জায়গায় গিয়েও কোন খবর পাচ্ছেন না।
এদিকে ছেলে সৌদি আরবের জেলে আছে এমন খবর পেয়ে তার বাবা ছেলেকে জেল থেকে মুক্ত করে দেশে পাঠানোর দাবিতে গত ২৪ এপ্রিল ওয়েজ আনার্র্স কল্যাণ বোর্ড, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। এরপরও তারা ছেলের সন্ধান পাচ্ছেন না। সোহরাব বেঁচে আছে কিনা তাও নিশ্চিত হতে পারছেন না তার পরিবার।
প্রায় ৬ মাস ধরে ছেলের সন্ধান না পেয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে তার পরিবার। সোহরাব হোসাইনের বাবা মো. সফির উদ্দিন ভালুকা প্রেসক্লাবে এসে সংবাদকর্মীদের মাধ্যমেও সরকারের কাছে তার ছেলের সন্ধান চেয়ে দেশে ফেরৎ আনার দাবি জানিয়েছেন।
সোহরাব হোসাইনের ছেলে ১০ম শ্রেণির ছাত্র ছাইম বলেন, ‘বাবা বিদেশ থেকে মাঝে মধ্যেই আমাকে ফোন দিতো। আমার লেখাপড়ার খবর নিতো। এখন ৬ মাস ধরে বাবার কোন ফোন পাচ্ছি না। বাবা কোথায় আছে, কেমন আছে? তাও জানি না। বাবার জন্যে আমরা সকলেই দুশ্চিন্তায় আছি। সৌদি প্রবাসী আমার বাবার সন্ধান চাই।’
সোহরাব হোসাইনের মা জাহানারা বলেন, ‘পুলাডা সৌদি গেছে মেলা বছর। চাইর-পাঁচ বছর আগে আইছাল। কয়েক মাস থাইক্যা আবার গেছে। মাঝে মধ্যে মোবাইলে বিডিও কল দিতো, তহন হেরে দেখবার পাইতাম। পরাই পাঁচ মাস আগে আমারে কিছু টেহা পাডাইছে। কইছে, “মা, তোমার যা মোন চায় কিইনো।” অহন কয়েক মাস অইল ফোন দেয় না। হের নগে কতা কবার পাই না, দেখফারও পাই না। হে কই আছে, কেমুন আছে তাও জানি না। উপুজিলার মল্লিকবাড়ি গ্রেরামের এক ছেরা আমাগো পুলার নগে একই জায়গায় চাকরি করে। কয়দিন আগে হের বাইতে গেয়া ফোনে হের নগে কতা কইছি। হেয় আমারে কইছে, “কাকি মোন খারাপ করুইন্যাজানি। আমনের পোলায় জেলো আছে। কয়দিন পরেই ছারা পাইব।” হের পরে অহন পর্যন্ত আর কুনু খবর নাই। পুলায় জেলো আছে, না-কি কেউ মাইরা হালাইছে তাও জানি না। পুলার চিন্তার কিছুই বালা নাগে না। সরকারের কাছে দাবি জানাই, আমার পোলারে খুইজ্জা বাইর কইরা, আমার কাছে ফিরাইয়া দেউক।’
বাবা মো. সফির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে সৌদি আরবে জেলে আছে এমন খবর পেয়ে, ছেলেকে জেল থেকে মুক্ত করে দেশে ফেরত পাঠানোর জন্যে আমি গত ২৪ এপ্রিল ওয়েজ আনার্র্স কল্যাণ বোর্ড, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তাদের কাছে ফোন করা হলে প্রতিবারই জবাব দেয়, “আমার আপনার আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি। সৌদি দূতাবাস থেকে এখনো কোন খবর আসেনি। আসলে জানাতে পারবো। ছেলে কোথায় আছে কোন জেলে আছে, না বাহিরে আছে তাও জানতে পারছি না। সে আদৌ বেঁচে আছে কি-না তাও নিশ্চিত না। সকারের কাছে দাবি আমার ছেলের সন্ধান করে তাকে দেশে ফেরৎ এনে দেয়ার। ’