সোনালি আঁশের সঙ্গে রূপালি কাঠি, আশার আলো দেখছে চাষি

সোনালি আঁশের পাশাপাশি রূপালি কাঠিতেও আশার আলো দেখছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাটচাষিরা। এক সময় রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজ, লাউ ও পুইশাকের জাংলা এবং বিভিন্ন শৌখিন পাটজাত পণ্য তৈরিতে পাটকাঠির সীমিত ব্যবহার হলেও এখন এর বহুমুখী ব্যবহার ও প্রয়োগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন পাটকেল বোর্ড উৎপাদন এবং শিল্পকারখানায় ব্যবহারের ফলে এর কদর ও দাম দুটোই বেড়ে চলেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন বিলে, খালের পাড়ে ও গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে পাটকাঠির কদম শুকানো হচ্ছে। কোথাও আবার কয়েক মুঠা করে আটি বেঁধে বৃত্তাকারে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে।

চাষিরা জানাচ্ছেন, এ বছর সঠিক সয়ম পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় পাট পচাতে বা জাগ দিতে বেশ সুবিধা হয়েছে। ফলে এবার পাটের আঁশের রঙ যেমন ভালো হয়েছে, তেমনি পাটকাঠির মানও উন্নত হয়েছে।

গ্রামীণ নারী-পুরুষ ভোর থেকেই চাষিদের পাটের আঁশ ছাড়াতে সহায়তা করছেন। বিনিময়ে তারা টাকা না নিয়ে পাটকাঠি নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার মজুরির বিনিময়েও পাটকাঠি বা টাকা পাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামজুড়ে খাল-বিল ও নদীতীরে আঁশ ছাড়ানোর এমন ব্যস্ততা চোখে পড়েছে।

উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের চাষি নজরুল মিয়া জানান, জ্বালানি সঙ্কটের কারণে এখানে পাটের আঁশ ছাড়াতে এসেছি। মজুরির পরিবর্তে পাটখড়ি (পাটকাঠি) নিচ্ছি।

পাটচাষি আব্দুর রহিম জানান, নারী শ্রমিকদের কাঠি দেওয়ার মাধ্যমে শ্রম ব্যয় অনেকটাই কমে আসে। পাটখড়ি দিলে শ্রমিকও খুশি, আমরাও উপকৃত হই।

এদিকে স্থানীয় পাটকাঠি ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে আঁটিপ্রতি ৫০-৬০ টাকায় পাটকাঠি কিনে ভ্যান, নসিমন, ট্রাক ও ট্রলারে করে শহর ও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে ১০০-১৫০ টাকায় বিক্রি করে প্রতি ভ্যানে ৩-৪ হাজার টাকা লাভ করছেন বলে জানান ব্যবসায়ী ছাত্তার আলী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাশিদুল কবির জানান, এ বছর উপজেলায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে দেশি ১১৫ হেক্টর ও তোষা ৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। পাট একটি অর্থকরি ফসল। এর পাতা জমিতে পড়ে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। এবার আঁশ ও কাঠি দুইয়েরই দাম ভালো। ফলে চাষিরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন, যার ফল মিলছে পাট উৎপাদনে।