সিলেটে বাড়ছে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ

সিলেটে বন্যার পানি ধীরে নামলেও দ্রুত বাড়ছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দা। কোন ভাবেই থামছে না পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। ডায়রিয়া, জ্বর, কাশি, সর্দিসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু, বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ।এসব রোগে বেশী আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বৃদ্ধ।

স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২২ জুন থেকে ২৮ জুন পর্যন্ত জেলার সবকটি উপজেলায় পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। সাত দিনে ডায়রিয়া, আর.টি.আই, চর্ম রোগসহ নানা রোগে ৬ হাজার ৭৯০ জন রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৭৪ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। গড়ে প্রতিদিন ৯৭০ জন এসব রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, যেখানে শয্যা সংখ্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা বেশি। এতে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষরা। এসব হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ রোগীই পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।

বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পরিবারের কেউ না কেউ এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বন্যায় রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় অনেক গ্রামাঞ্চলের রোগীদের চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে পারছেন না। এরমধ্যে অনেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে না পেরে পল্লি চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।

বালাগঞ্জ উপজেলার সাকিব আহমেদ গত ৩-৪ দিন ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত তিনি জানান, বন্যার পানি আসার পর জ্বরে আক্রান্ত হই। এখনো একই অবস্থা, ফার্মেসি থেকে ঔষধ এনেছি, এগুলো খাচ্ছি। এখন আগের থেকে কিছুটা কমেছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার রাহেনা বেগম তিনি জানান, ছোট দুই ছেলে মেয়ে দুজনেই অসুস্থ। এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন নি। পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। এ অবস্থায় একজন পল্লি চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিলেও এখন সুস্থ হননি।

কোম্পানীগঞ্জের শিমুলতলা গ্রামের নুরেহা বেগম জানান, পরিবারের সবাই জ্বর, সর্দি, চর্মরোগে আক্রান্ত। হাসপাতালে গিয়ে ঔষধ নিয়ে এসেছেন সেগুলো সবাই খাচ্ছেন। এ এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, কয়েকদিন থেকে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগই ডায়রিয়া ও জ্বরে আক্রান্ত। অনেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, বন্যার সময় পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, জ্বর, কাশি, সর্দি, চর্মরোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। বন্যার সময়ে স্বাস্থ্যসেবা দিতে ইউনিয়ন ভিত্তিক ১২৬টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা পানিবন্দিদের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যালাইন বিতরণ এবং চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।