পর্যটকদের ভরসা ‘হাউজ বোট’

পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাময় জেলা সুনামগঞ্জ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি হাওরের রাজধানী বা হাওরকন্যা খ্যাত এ জেলা। হাওর-পাহড়ে ঘেরা এ জেলা যেন আল্লাহর গড়া অপূর্ব এক সৃষ্টি।

এ জেলায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রামসার সাইট খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওর। মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ১২,৬৬৫ হেক্টর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামে পরিচিত ১২৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ হাওরে এসে মিশেছে মেঘালয় পাহাড়ের ৩০টিরও বেশি ঝর্ণা। এ ছাড়াও রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম শিমুল বাগান, রূপের নদী যাদুকাটা, নীলাদ্রি লেক, লাকমা ছড়া, লাল ছড়াসহ অসংখ্য দর্শনীয় পর্যটন স্পট। যা দেখতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। বিশেষ করে ছুটির দিনে এসব স্থানে থাকছে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়।

হাওর ও মেঘালয় পাহড়ের অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্যে বিমোহিত হচ্ছেন পর্যটকরা। এদিকে ভ্রমণকে সহজ, আরামদায়ক ও নিরাপদ করে তুলছে হাওরে চলা হাউজ বোটগুলো। সড়কপথে যাতায়াত ব্যবস্থা নাজুক হওয়ায় হাউজ বোটই পর্যটকদের একমাত্র ভরসা।

পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদে হাউজ বোটে করেই বর্ষাকালে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন পর্যটকরা। অত্যাধুনিক ডিজাইন, মনোরম পরিবেশ, খাবার, শৌচাগার ও রাত্রিযাপনের সু-ব্যবস্থা থাকায় হাউসবোটের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে পর্যটকরা। আর পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে জেলায় ১৩০টিরও বেশি হাউজ বোট সচল রয়েছে। গত কয়েক বছর আগেও সুনামগঞ্জের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর পাশে ছিলো না কোন থাকার ব্যবস্থা। মানসম্মত খাবার, শৌচাগার ও নিরাপদে রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হতো দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রকৃতিপ্রেমীদের। হাউজ বোটের কল্যাণে সেই দুর্ভোগ লাঘব হওয়ায় হাওরে এখন পর্যটকদের উপস্থিতি বাড়ছে।

ফরিদপুর থেকে আসা পর্যটক শফিকুল ইসলাম জনি বলেন, ফেইসবুক ও ইউটিউবে টাঙ্গুয়ার হাওর সম্পর্কে জানতে পারি। তারপর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে এসেছি। টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্যের কথা মুখে বলে বুঝানো সম্ভব না। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে হাওরে আসতে হবে। এক কথায় অসাধারণ এ হাওরের সৌন্দর্য। 

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা প্রকৃতিপ্রেমী রিয়া চৌধুরী বলেন, মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রী লেক, বারিকটিলা শিমুলবাগানসহ সবকটি পর্যটনকেন্দ্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। আমি প্রতিবছরই হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসি। আগে এসব পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভালো মানের কোনো হোটেল, খাবার ও শৌচাগার ব্যবস্থা না থাকায় আমরা পর্যটকরা এসে বিপাকে পড়তাম। তবে বর্তমানে হাওরে হাউজ বোট থাকার সুবাদে নিরাপদে থাকা সেই সাথে খাবার ও শৌচাগারের মানসম্মত ব্যবস্থা থাকায় আমাদের সেই দুর্ভোগটা এখন নেই। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা রয়েছে এ সকল বোটগুলোতে।

বাশরী এ লাক্সারি হাউজ বোটের মালিক শাহাদাত হোসেন বলেন, সুনামগঞ্জের হাওর সম্পর্কে আগে মানুষ এতটা জানত না। তবে হাউজবোটগুলোর প্রচারের সুবাদে মানুষ সেটা জানতে পেরেছে। তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছে হাওরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে। খাবার, মানসম্মত শৌচাগার ও রাত্রি যাপনের সু-ব্যবস্থা থাকায় পর্যটকরা হাউজবোটের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়াও হাওর, পাহাড়, নদীসহ সবকিছুর সৌন্দর্য একসাথে উপভোগ করতে পারছে  প্রকৃতিপ্রেমীরা।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী নৌ-যানের মাধ্যমে পর্যটকদের ভ্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিষয়টিকে মাথায় পর্যটকবাহী নৌযান নির্দেশিকা প্রনণয় করা হয়েছে। এই নির্দেশিকায় পর্যটকদের নিরাপত্তা ও  হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষার বিষয়টাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন।