হাইকোর্টের রায়ের আলোকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলাসহ তদন্তাধীন মামলায় গণমাধ্যমে বক্তব্য বন্ধ চেয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি ও ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে এ নোটিশ পাঠানো হয়।
বুধবার (২৯ মে) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুহাম্মদ শিশির মনির তাদেরকে এ নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়েছে, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গিয়ে নিখোঁজ হন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী তিনি নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি জনমনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। 'টক অব দ্যা কান্ট্রি' হিসেবে পরিণত হয়েছে।
ইলেকট্রনিক, প্রেস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিয়েল 'টাইম আপডেট' প্রচার করা হচ্ছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে তদন্ত পরিচালনা করছে। সময়ে সময়ে কর্তৃপক্ষ ঘটনার হালনাগাদ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করছে। সাংবাদিকরা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নানা ধরণের প্রশ্ন উত্থাপন করছেন।
প্রেক্ষিত বিবেচনায় গণমাধ্যমের সামনে কর্তৃপক্ষ উত্তর প্রদান করছেন। ছোট-খাট অনেক বিষয় উঠে আসছে। লাইভ সম্প্রচার হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম পছন্দ অনুযায়ী হেডলাইন করছে। ফ্রিল্যান্সার ব্যক্তিবর্গ খণ্ডাংশ উল্লেখ করে ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটকসহ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন। এ বিষয়ে নানা বিভ্রান্তিও তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগ আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি (৩৯ বিএলডি ৪৭০) মামলায় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছেন, ইদানিং প্রায়শই লক্ষ্য করা যায় যে, বিভিন্ন আলোচিত অপরাধের তদন্ত চলাকালীন সময়ে পুলিশ-র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট আদালতে হাজির করার পূর্বেই বিভিন্নভাবে গণমাধ্যমের সামনে উপস্থাপন করা হয়, যা অনেক সময় মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অমর্যাদাকর এবং অনুমোদনযোগ্য নয়। বিভিন্ন মামলার তদন্ত সম্পর্কে অতি উত্সাহ নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে ব্রিফিং করা হয়ে থাকে। আমাদের সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালতে একজন অভিযুক্ত বিচার প্রক্রিয়া শেষে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী সাব্যস্ত না হন ততক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে বলা যাবে না যে তিনি প্রকৃত অপরাধী বা তার দ্বারাই অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে।’
গণমাধ্যমের সামনে গ্রেপ্তারকৃত কোনো ব্যক্তিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা সংগত নয় যে, তাঁর মর্যাদা ও সম্মানহানি হয় এবং তদন্ত চলাকালে অর্থাৎ পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের পূর্বে গণমাধ্যমে গ্রেপ্তারকৃত কোনো ব্যক্তি বা মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পর্কে এমন কোনো বক্তব্য উপস্থাপন সমীচীন নয়, যা তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে বিতর্ক বা প্রশ্ন সৃষ্টি করতে পারে।
সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট কর্তৃক ঘোষিত রায় সকলের জন্য বাধ্যকর। ফলশ্রুতিতে হাইকোর্ট বিভাগের উল্লিখিত রায় সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য অবশ্য পালনীয়।
এমন পরিস্থিতিতে আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডসহ সকল তদন্তাধীন মামলার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলার জন্য নোটিশ গ্রহীতাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী উচ্চ আদালতের শরনাপন্ন হয়ে যথাযথ আইনি প্রতিকার চাইতে বাধ্য হব।