কারাগারে সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন চেয়ে আবেদন করেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার পর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির হন তিনি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের এডিশনাল চিফ মেট্রপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মাহবুবুল হক রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে এ আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন। 

এদিকে আত্মসমর্পণের আগে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে মাহমুদুর রহমান বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আজকে আত্মসমর্পণ করেছি। এ লড়াই অব্যাহত থাকবে। এ মামলা পুরোটাই সাজানো ও মিথ্যা মামলা। তৎকালীন সরকার ফ্যাসিবাদ ব্যবস্থা চালু রাখতে আমার বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে।

এদিন বেলা ১১টার দিকে মাহমুদুর রহমান ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। একই সঙ্গে কারাগারে মাহমুদুর রহমানকে প্রথম শ্রেনীর মর্যাদা দেওয়ার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

এ সময় বিপুল সংখ্যক আইনজীবী, গণমাধ্যম কর্মী ও আইন শৃংঙ্খলা বাহিনী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

শুনানির সময় আইনজীবীরা বলেন, হয়রানিমূলক মামলায় দৈনিক আমার দেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। তিনি দেশে ফিরে আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। 

এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমানের আইনজীবী সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো আদালত যদি এক বছরের বেশি কারাদণ্ড দেন তাহলে তিনি এ মামলায় জামিন দিতে পারেন না। এ আদালত থেকে গত বছরের ১৭ আগস্ট মাহমুদুর রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। 
এক ধারায় পাঁচ বছর আরেক ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী এ আদালত এ মামলায় জামিন দিতে পারেন না। আমরা অতিদ্রুত মহানগর দায়রা আদালতে মাহমুদুর রহমানের জামিন আবেদন করবো। আশা করি তিনি জামিন পাবেন।

বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দৈনিক আমার দেশ এর নগর সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, আদালতের আদেশের সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করা হয়েছে, খুব দ্রুত আপিল করা হবে। আশাকরি দুই একদিনের মধ্যে আপিল আদালতে খালাস চেয়ে আবেদন করা হবে।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময় থেকে এ পর্যন্ত (মামলা দায়েরের সময়) বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও দলটির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্য দলগুলোর উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে যোগসাজশে (সাবেক) প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন।

এ ঘটনায় ডিবি পুলিশের তৎকালীন পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় এ মামলা করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শফিক রেহমান ও মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত।
 
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট এ মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নুর সাংবাদিক শফিক রেহমান ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানসহ পাঁচজনের সাত বছরের কারাদণ্ড দেন। সে সময় মাহমুদুর রহমান পলাতক (দেশের বাইরে) থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।