ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অনিয়ন্ত্রিত চলাচল নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী। জননিরাপত্তা, সড়ক শৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা রোধে জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে রোববার (৪ মে) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট করা হয়।
রিট আবেদনকারীরা হলেন- অ্যাডভোকেট মো. জাকারিয়া হাবিব, অ্যাডভোকেট বিবেক চন্দ্র এবং অ্যাডভোকেট মো. সাদ্দাম হোসেন। তারা ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহণ আইন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী সরকারের দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতা চ্যালেঞ্জ করেছেন।
রিটে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে এবং দেশের অন্যান্য শহরে বিপুলসংখ্যক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে, যা সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই, চালকদের সনদ নেই, প্রশিক্ষণ নেই, ফলে নিয়মিতভাবে ঘটছে প্রাণঘাতির মতো দুর্ঘটনা। জননিরাপত্তা ও সড়ক শৃঙ্খলার স্বার্থে এগুলোকে যথাযথ নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা এখন সময়ের দাবি।
আইনজীবী বিবেক বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অনিয়ন্ত্রিত চলাচল প্রতিদিন নতুন নতুন দুর্ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। সড়কপরিবহন আইন অনুযায়ী সরকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে, অথচ কার্যকর কোনো নীতিমালা নেই। সেই ব্যর্থতার বিরুদ্ধে আমরা আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
রিটে ২৩ এপ্রিল প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ‘ব্যাটারিচালিত রিকশার নৈরাজ্য: নিরাপত্তা-শৃঙ্খলার প্রশ্নে আপস নয়’ শিরোনামের একটি শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। একই দিন প্রথম আলো অনলাইনের ইংরেজি সংস্করণেও তা প্রকাশিত হয়। এই সম্পাদকীয়টি যুক্ত করে আইনজীবীরা সরকারের নিষ্ক্রিয়তা এবং নীতিমালা প্রণয়নের ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।
রিটে আদালতের কাছে দুটি রুল জারি চাওয়া হয়েছে। তা হলো- নীতিমালা বা বিধিমালা প্রণয়নে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়ার রুল।
এছাড়াও ঢাকায় কতগুলো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে, বিদ্যমান নিরাপত্তা-ব্যবস্থা কেমন, কোনো নীতিমালা আছে কি না- এসব বিষয়ে চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
রিটে যাদের বিবাদী করা হয়েছে, তারা হলেন: সড়ক পরিবহণ ও সেতু সচিব, আইন সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক এবং আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল ব্যক্তি।
আইনজীবী বিবেক চন্দ্র জানান, বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে চলতি সপ্তাহেই রিটের ওপর শুনানি হতে পারে। তিনি বলেন, সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। আমরা চাই সরকার অবিলম্বে এই ইস্যুতে কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করুক।