নানান অপকর্মের কারণে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে হাসান জাহিদ তুষারকে। বুধবার (২৯ মে) জনপ্রশাসন চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর উপ-সচিবের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
হাসান জাহিদ তুষার ক্ষমতার অপব্যবহার, নারী নির্যাতন,নৈতিক স্খলন নানান অপকর্মের তথ্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ গেলে সেটার ভিত্তিতে তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে দৈনিক খবর সংযোগকে।
এদিকে বুধবার ধানমণ্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে দুই কর্মকর্তার একসাথে চাকুরিচ্যুতির কারণ কি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন অভিযোগ আছে কিনা আমি জানিনা। নিশ্চয় তাদের কর্তব্যে কোন প্রকার বিচ্যুতি ঘটেছে দায়িত্ব পালনে। সেখানে কি রকম সেটা আমি তো জানিনা।
গত বছর হাসান জাহিদ তুষারের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী বরাবর অভিযোগ করে মাগুরা সদর উপজেলা হাজীপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সভাপতি চাঁদ আলী, সাধারণ সম্পাদক কেরামত আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক এরাদ আলী লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয় তুষারের ছত্রছায়ায় তাহাজ্জদ মেম্বার,আরজু, জুয়েলের নেতৃত্বে একটা সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে ওঠে এবং ৩ নং শ্রীরামপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদককে পিটিয়ে আহত করে। পরবর্তীতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
পরবর্তীতে খুনিদের বিরুদ্ধে মাগুরা সদর থানায় মামলা হলে খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয় খুনি তাহাজ্জদ মেম্বার এবং তার পরিবারের কোন সদস্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে কখনো জড়িত ছিলনা।
৩নং হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আশরাফুল আলম ওরফে আরজু মোল্লা ও মাগুরা সদর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব কামরুজ্জামান জুয়েলের নেতৃত্বে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তোলে।
১৯৭১ সালে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আশরাফুন্নবী আশু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে হাসান জাহিদ তুষারের পিতা মিয়া আব্দুর রাজ্জাক ১৯৭১ সালে ঝিনাইদহ জেলার পদ্মাকর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে জামায়াতে ইসলামের সমর্থনে।
শ্রীরামপুর ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি চাঁদ আলী দৈনিক খবর সংযোগকে বলেন, উনি যে জায়গায় ছিলেন সেই জায়গায় ক্ষমতা দেখিয়ে বিএনপিকে সাথে নিয়ে আমাদের মতো সাধারণ তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতন করেছে সব সময়। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটির নেতা জাহিদ হোসেন জোয়ার্দারকে পিটিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে। তৃণমূল আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে তুষার এটাও অভিযোগ করেন তিনি।
তুষারের পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল কিনা জানতে চাইলে চাঁদ আলী বলেন, উনার পরিবারের কোন মানুষই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত বিগত দিনেও জড়িত ছিলনা,এখনো নাই। উনার পরিবারের কেউ এই দলভুক্ত (আওয়ামী লীগের রাজনীতি) যুক্ত না। উনি মেধাবী ছাত্র ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তারপর ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়।
শ্রীরামপুর ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কেরামত আলী দৈনিক খবর সংযোগকে জানান,উনি( তুষার) তার ভাতিজা তাহাজ্জদ এবার মেম্বার হয়েছে তাকে নিয়ে নতুন করে দল খুলেছে। উনি দল শুরু করেই আমাদের দলের এক কর্মীকে তাকে মার্ডার করে দেয়। মার্ডারের পর পরে মামলা হলে খুনিরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর তুষারের সহযোগিতা নিয়ে খুনিরা বাড়ি ফিরেই আবার আমাদের আওয়ামী লীগের ৭/৮ জনকে মেরে হাত-ভেঙ্গে পঙ্গু করে দেয়। আমার এক ভাগ্নেকেও পঙ্গু করে দিয়েছে তুষারের সন্ত্রাসী বাহিনী।
কেরামত আলী আরও জানান,উনি যে কায়দায় দল শুরু করেছে আমাদের অস্থির করে দিচ্ছে।
তুষারের আওয়ামী লীগ করতে বাঁধা কোথায় প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উনার পূর্ব পুরুষরা কোনোদিন আওয়ামী লীগ করেনাই আমরা যতটা শুনেছি জেনেছি। উনার এক দাদা বজলু নামে বিএনপির কোন একটা সদস্য ছিল। এখন ঢাকায় থাকে।
উনার পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগ করেনি আর উনি ঢাকায় পড়াশোনা করাকালীন সময়ে শুনেছি আওয়ামী লীগ করেছে। গ্রামে এসে আমাদের সাথে কোনদিন দল সমাজ করেনি, আজ পর্যন্ত করেও না। ভাই-ভাগার লেখাপড়া শিখে সবাই বাইরে থাকে। উনার বড় একটা ভাই ঢাকায় বিএনপির বড় একটা পদেও ছিল এইটুকুই আমরা জানি।