বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত থেকে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি ও প্রচারের অভিযোগে এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। শুধু নিজেরাই নন, এই যুগল অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল (২০ অক্টোবর) ভোর সাড়ে ৩টায় বান্দরবান জেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এসময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল, সিমকার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ পর্নো ভিডিও তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।
সিআইডি বলছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হতে না পারা এ যুগল দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এলেও অনলাইনে রয়েছে তাদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি ও প্রমাণ। মাত্র এক বছরের মধ্যেই তারা পর্নো তারকাদের আন্তর্জাতিক পারফর্ম্যান্স র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে উঠে আসেন।
সিআইডির গণমাধ্যম শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে তাদের প্রথম ভিডিও প্রকাশিত হয়। শুধু নিজেরাই পর্ন ভিডিও তৈরি করা নয় বরং আরও মানুষদেরকে এ জগতে সম্পৃক্ত করার মতো বেআইনি কর্মকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে।
জসীম উদ্দিন খান বলেন, গত এক বছরে এসব প্ল্যাটফর্মে তাদের ১১২টি ভিডিও প্রকাশিত হয়, যা ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। মাত্র এক বছরের মধ্যেই তারা পর্নো তারকাদের আন্তর্জাতিক পারফর্ম্যান্স র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানে উঠে আসেন। ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী তাদের অবস্থান অষ্টম।
পর্ন-তারকা যুগলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, একাধিক আন্তর্জাতিক পর্নো ওয়েবসাইটে তারা ভিডিও আপলোড করতেন। এভাবে খোলাখুলি প্রচারণার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রাম, ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করেও তারা প্রচারণা চালাতেন। এসব প্রচারণায় ইন্ডাস্ট্রিতে যুক্ত হওয়ার জন্য অন্যদেরকে প্রলুব্ধ করে বিভিন্ন বার্তা প্রকাশ করতো তারা। আগ্রহীরা নতুন ক্রিয়েটর হওয়ার জন্য তাদের সঙ্গে টেলিগ্রামের মাধ্যমে যোগাযোগ করলে নতুনদের নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করাও ছিল তাদের কাজ। যেমন: টেলিগ্রাম চ্যানেলে নতুন ক্রিয়েটর এড করলে নগদ টাকা দেওয়া হবে বলে তারা বিজ্ঞাপন দিতো।
জসীম উদ্দিন বলেন, অনলাইন জগৎটা সবার জন্য উন্মুক্ত হওয়ায় সেভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তবে ইতোমধ্যে প্রকাশিত ১১২টি পর্নো ভিডিও যাতে বাংলাদেশ থেকে কেউ দেখতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি এই কাজের মাধ্যমে তারা কী পরিমাণ অর্থ আয় করেছেন, সেই অর্থ কোন মাধ্যমে দেশে এনেছেন, সেসব জানার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া নতুন করে যাদেরকে যুক্ত করেছেন, তাদের কত টাকা দিতেন, কীভাবে উদ্বুদ্ধ করতেন তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।