যেভাবে পর্ন তারকা হয়ে উঠলেন দম্পতি

আজিম-বৃষ্টি দম্পতি। দু’জনের বয়সই ২৮। আজিমের জন্ম চট্টগ্রামে আর বৃষ্টির মানিকগঞ্জে। প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেনি দু’জন। সংসারে অভাব অনটন ছিল প্রবল। অর্থের অভাব মেটাতে গিয়ে তারা নিজেরাই পর্নো ভিডিও তৈরি শুরু করেন। এভাবেই তাদের একেকটি ভিডিও সোশাল মিডিয়া একাউন্টকে অন্য প্লাটফর্মের দর্শকদের মধ্যে প্রমোট করেন।

বাংলাদেশি অন্য পারফর্মারেরা তাদের পরিচয় ও চেহারা গোপন রাখলেও, এই দম্পতি ভিডিওতে মুখ উন্মুক্ত রাখতেন এবং সেই ভিডিওগুলো একাধিক আন্তর্জাতিক পর্ন ওয়েবসাইটে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম একাউন্টগুলোকে খুবই পরিকল্পিতভাবে তাদের কনটেন্ট প্রচারের জন্য ব্যবহার করেন।

যেভাবে চলতো তাদের কার্যক্রম
আমাদের তদন্তে দেখা গেছে, তাদের তৈরি একটি যৌথ টেলিগ্রাম চ্যানেল ২২ মে ২০২৪ সালে খোলা হয়, যেখানে বর্তমানে প্রায় ২,০০০ সদস্য রয়েছেন। এই চ্যানেলটি এই দম্পতি যৌথভাবে পরিচালনা করেন।

এই চ্যানেলে নিয়মিত তাদের পর্নোগ্রাফিক ভিডিও সংক্রান্ত কনটেন্ট শেয়ার করা হয়। ৯ সেপ্টেম্বর এ একটি পোস্টে ইংরেজিতে লিখেছিলেন: ‘নতুন ভিডিও প্রকাশ হয়েছে, উপভোগ করো ছেলেরা।’

প্রতিবার নতুন ভিডিও প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে তারা লিংকটি ওই চ্যানেলে এবং অন্যান্য সোশাল প্লাটফর্মের তাদের একাউন্টে শেয়ার করেন।

২৪ মে ২০২৫ সালে এ টেলিগ্রামে দুটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে একটি পর্ন ওয়েবসাইটের একাউন্ট থেকে ১,৫০,০০০ টাকার সমপরিমাণ লেনদেনের স্ক্রিনশট দেখা যায়। তিনি ক্যাপশনে ইংরেজিতে লিখেছিলেন: ‘টাকাই শক্তি।’

১৪ জুন ২০২৫ তারা পর্ন প্রোফাইলের ড্যাশবোর্ডের একটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে ২০২৪ সালের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আয় দেখা যাচ্ছে ১৫,৭০৩ মার্কিন ডলার (প্রায় ২০ লাখ টাকা)।

এক সপ্তাহ পর, ২১ জুন, তিনি আরেকটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে লেখা ছিল: ‘একটি ভিডিও থেকে আয় ১,০০,০০০ টাকা,’ এবং প্ল্যাটফর্মটিকে ধন্যবাদ জানান।

একই ভাবে আরও অন্তত দশটি পোস্টে তাদের আয়ের স্ক্রিনশট দেখিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন।

২০২৫ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ৩৫৬টি পোস্ট ছিল, যার প্রথমটি প্রকাশিত হয়েছিল ৩ মে ২০২৪ সালে। এই পোস্টগুলোর অনেকগুলোতেই তার পর্ন কনটেন্ট প্রচার করা হয়েছে এবং অনুসারীদের টেলিগ্রাম গ্রুপে যোগ দিতে আহ্বান করা হয়েছে।

রোববার (১৯ অক্টোবর) রাতে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাস স্টেশন সংলগ্ন হাজীপাড়া এলাকার একটি ছয়তলা ভবনের ফ্ল্যাট থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকালে আলোচিত দম্পতি আজিম ও বৃষ্টিকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাইবার বিভাগের উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।