মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেবল উচ্চশিক্ষার পাঠশালা নয়, বরং এগুলো একেকটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ‘জীবন্ত শহর’। যেখানে শিক্ষার পাশাপাশি মিলেমিশে আছে শতবর্ষী ইতিহাস, স্থাপত্যশৈলী, খেলাধুলার উন্মাদনা এবং বৈচিত্র্যময় বিনোদন। এসব ক্যাম্পাসে লুকিয়ে আছে এক বিশেষ ‘শুধুমাত্র আমেরিকায়’ অভিজ্ঞতা, যা সাধারণ পর্যটকদের জন্যও এক নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

আগস্ট থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত আমেরিকাজুড়ে যখন কলেজ ফুটবলের মৌসুম চলে, তখন পুরো ক্যাম্পাস প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। এটি এখানে কেবল একটি খেলা নয়, বরং এক গভীর সামাজিক সংস্কৃতি। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দ্য বিগ হাউস’ স্টেডিয়াম, যার আসন সংখ্যা ১ লাখ ৭ হাজারেরও বেশি, সেখানে হাজার হাজার মানুষের কণ্ঠে ‘ফাইট সং’ আর মার্চিং ব্যান্ডের সুর এক অভূতপূর্ব পরিবেশ তৈরি করে। পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির বিখ্যাত ‘হোয়াইট আউট গেম’ যেখানে গ্যালারির লক্ষাধিক দর্শক সাদা পোশাকে গর্জে ওঠেন, তা পর্যটকদের জন্য এক বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। খেলার আগে আয়োজিত ‘টেইলগেট পার্টি’ শিক্ষার্থী ও প্রাক্তনদের এক মিলনমেলায় পরিণত করে।

উত্তর-পূর্ব যুক্তরাষ্ট্রের আটটি মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় বা ‘আইভি লিগ’ তাদের গথিক স্থাপত্য এবং ঐতিহাসিক সংগ্রহের জন্য বিশ্বখ্যাত। ১৬৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠই নয়, এর মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি এবং ২৮১ একরের আর্নল্ড আর্বোরেটাম প্রাকৃতিক নিদর্শনের এক বিশাল ভাণ্ডার। অন্যদিকে, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির ‘নাসাউ হল’ ভবনটি একসময় যুক্তরাষ্ট্রের অস্থায়ী রাজধানী ছিল, যা আজও মার্কিন বিপ্লবের ইতিহাসকে ধরে রেখেছে। ইয়েল ইউনিভার্সিটির রেয়ার বুক লাইব্রেরি এবং পিবডি মিউজিয়ামের ডাইনোসর কঙ্কাল জ্ঞানপিপাসুদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।

১৮৩৭ সালে চেইনি ইউনিভার্সিটির মাধ্যমে শুরু হওয়া HBCU ক্যাম্পাসগুলো কেবল শিক্ষার নয়, বরং আফ্রিকান-আমেরিকানদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের স্মৃতিবিজড়িত মোরহাউস কলেজ কিংবা টাস্কেগি ইউনিভার্সিটির জর্জ ওয়াশিংটন কারভার মিউজিয়াম নাগরিক অধিকার সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে। হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটির ‘হোমকামিং’ উৎসব, যা প্যারেড ও ‘স্টেপ শো’ নাচের মাধ্যমে কৃষ্ণাঙ্গ সংস্কৃতিকে বিশ্বমঞ্চে পরিচিত করে তোলে।

পরিশেষে বলা যায়, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিটি কোণ একেকটি গল্প বলে। মাঠের গর্জন থেকে শুরু করে লাইব্রেরির শান্ত পরিবেশ সব মিলিয়ে এই ক্যাম্পাসগুলো আমেরিকার প্রাণশক্তি ও ঐতিহ্যের এক অপ্রতিম প্রতিফলন।