কুবিতে আসন খালি ৭৭টি, ভর্তি বাতিলের আশঙ্কা আরও ৪১ জনের

সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছের জাঁতাকলে পড়ে শিক্ষার্থী হারাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যমতে, প্রতি বছর ১০৩০ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি হওয়ার কথা থাকলেও ২০২২-২৩ সেশনে ভর্তি হয়েছে ১০২৮ জন। তবে বছর পেরোতেই ৭৭ জন শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও ৪১ জন শিক্ষার্থী সনদপত্র উত্তোলন করার পর নির্ধারিত সময়েও জমা দেয়নি বলে জানিয়েছে রেজিষ্ট্রার দপ্তর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারাও হয়ত অন্য কোথাও ভর্তি হয়ে গেছে।

এদিকে কোটার ৯১টি আসনের অধিকাংশ আসনই শূন্য থাকে। গুচ্ছের প্রভাবে শিক্ষার্থী না পাওয়ায় গেল বছরই মোট আসন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ১০ আসনটি আসন কমিয়ে আনা হয়েছে।

রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত, রসায়ন, কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ার বিভাগে ৮ জন, ফামের্সী বিভাগে ৭ জন, নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৬ জন। এ ছাড়াও পরিসংখ্যান ও একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে ৪ জন, পদার্থ, ইংরেজি, অর্থনীতি, আইসিটি বিভাগে ৩ জন, মাকের্টিং বিভাগে২ জন, বাংলা, লোক প্রশাসন ও অর্থনীতি বিভাগে ১ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি বাতিল করেছে।

এদিকে সার্টিফিকেট তুলে জমা দেয়নি রসায়নের ৮ জন, গণিতের ৬ জন, বাংলা, নৃবিজ্ঞানের ৪ জন, পদার্থ, পরিসংখ্যান ৩ জনসহ লোক প্রশাসন, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ও মাকের্টিং বিভাগের ২ জন। এ ছাড়াও প্রত্নতত্ত্ব, গণযোগাযোগ, সাংবাদিকতা, কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ার, আইসিটি, ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা বিভাগ ও ইংরেজি বিভাগের ১ জন শিক্ষার্থী।  

ভর্তি বাতিল ও সার্টিফিকেট জমা না দেওয়ার কারণ হিসেবে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের স্বকীয়তা হারিয়েছে। সারা বছর ভর্তি প্রক্রিয়া চালু থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবে, সে বিষয়ে মন স্থির করতেই পারে না। ফলে শিক্ষার্থীরা এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। এতে সিট ফাঁকা অবস্থায় কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হয়।

জান্নাতুল নাইম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, জেলায়-জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার মূল কাজ দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। কিন্তু জেলায় জেলায় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার হয়েছে সেখানের শিক্ষার্থীদের পড়ানোর মতো দক্ষ শিক্ষক না থাকে তাহলে এসব বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া উচিত। 

অনেক আশা নিয়ে ২০২১ সালে ২০টি সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে শুরু হলেও প্রত্যাশার সিকিটুকুও পূরণ করতে পারেনি এই ভর্তি কার্যক্রম। তিনি যোগ করেন। 

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাকির সায়েদ উল্লাহ বলেন, এ বিষয়ে আমরা অবগত আছি। কিন্তু গুচ্ছের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। শুধু এই বছর না, প্রতি বছরই বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট খালি থেকে যাচ্ছে। এ বিষয়ে গুচ্ছের দায়িত্বরতদের কাজ করতে হবে।

অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে এ সমস্যা সমাধান করা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো একাডেমিক মিটিং পাশ হয়ে তারপর আসতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থী যদি আবার চলে না যায় সেক্ষেত্রেও একটা জটিলতা সৃষ্টি হবে।

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. তানজিম খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট খালি থাকা দেশ ও জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। গুচ্ছের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত আগামী সপ্তাহে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্ত শেষ হলেই আমরা পদক্ষেপ নিব। 

তবে এই ক্ষতিপূরণ করার কোনো অপশন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের বিষয়ে তো বলতে পারতেছি না, তবে সামনে যাতে এই ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে আমরা অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিবো।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য গুচ্ছ যথাযথ পদ্ধতি না। এখন গুচ্ছ থাকবে কি থাকবে না, বা বিকল্প কোন কিছু করা যায় কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি যোগ করেন।