রোববার ক্লাসে ফিরছেন জবি শিক্ষার্থীরা 

তিন দফা দাবির আন্দোলন শেষে ক্লাসে ফিরছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তিন দিনের অচলাবস্থার পর  রোববার (১৮ মে) থেকে পুরোদমে শুরু হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা। 

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ায় শুক্রবার (১৬ মে) রাতেই জবির  শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাস ভবন যমুনা সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদের সামনে থেকে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন। 

এবার ক্লাসে ফেরার পালা। সেই মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ক্লাস, সেমিস্টার ফাইনাল, মিডটার্মসহ প্রশাসনিক কাজ রোববার থেকে আবারও চালু হচ্ছে। বেশকিছু বিভাগের পরীক্ষার তারিখ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পেছানো হয়েছে। তবে ক্লাস নিয়মিত চালু থাকবে। 

আন্দোলন শেষে শনিবার (১৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। এদিন বিকেলে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মাঠে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সমারোহ দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ প্রশাসনের অনেকের উপস্থিতি দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্ত্বর, শহীদ মিনার, বিজ্ঞান অনুষদের মাঠেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা যায়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও বাড়ে।

আবাসন ভাতা, প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনসহ তিন দফা দাবিতে গত বুধবার ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচিতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এদিন তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এতে অন্তত ৩৬ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের অধিকাংশই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন। 

এরপর তিন দফা দাবির সঙ্গে যুক্ত হয় পুলিশের বিচারের দাবিও। তিন দিন অবস্থানের পর ইউজিসির চেয়ারম্যান দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন তুলে নিয়ে পুনরায় কার্যক্রম শুরুর ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিন । 

এদিকে আন্দোলন শেষে ক্লাসে ফিরতে পেরে স্বস্তিতে শিক্ষার্থীরা। প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নীলাঞ্জনা হালদার বলেন, ‘তিন দিনের আন্দোলনে অনেক ক্লান্ত সবাই৷ তবে আশার বাণী হচ্ছে ইউজিসি আমাদের দাবি মেনে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটডাউন তুলে নেওয়া হয়েছে, আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। আমরা আবার পড়াশোনায় মনোযোগী হবো। রাস্তা থেকে আমরা এখন বাসায় এসেছি, মনে কিছুটা স্বস্তিও কাজ করছে।’

তবে কিছুটা শঙ্কাও আছে বলে জানান এই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘যদি আগের মতো আমাদের দাবি বাস্তবায়িত না হয়, তবে আবারও আন্দোলনে নামতে হবে। নিজেদের পড়াশোনা ছেড়ে আমরা বারবার আন্দোলনে নামতে চাই না। আশা করি আমাদের দাবিগুলো দ্রুতই বাস্তবায়িত হবে।’

কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের মূল কাজ পড়াশোনা করা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছি, সেজন্য আমরা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমরা পড়ার টেবিলে ফিরতে চাই, আর আন্দোলনে নামতে চাই না। সরকারকে আমাদের মেনে নেওয়া দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।’