ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ক্যাম্পাসে জমে উঠেছে নির্বাচনি উত্তাপ। ছয় বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই নির্বাচন।
ভোটার তালিকা, প্রার্থী মনোনয়ন, প্রচারণা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে আদালতের নাটকীয় হস্তক্ষেপ- সবকিছু মিলিয়ে ডাকসু নির্বাচন ইতোমধ্যে জাতীয় আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। এখন সবার দৃষ্টি ৯ সেপ্টেম্বরের ভোটের দিনকে ঘিরে।
তফসিল ঘোষণা
গত ২৯ জুলাই ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এবার ভোটগ্রহণ প্রথমবারের মতো হলে নয়, বরং নির্ধারিত ৬টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে।
ভোটার তালিকা ও মনোনয়ন প্রক্রিয়া
৩০ জুলাই খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়, যা ১১ আগস্ট চূড়ান্ত হয়। এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমাদান প্রক্রিয়া শেষ হয় ১৯ আগস্ট। ২৬ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়।
প্রার্থী ও প্যানেল
এবার ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৮ জন, জিএস পদে ১৯ জন এবং এজিএস পদে ২৮ জনসহ মোট প্রার্থী সংখ্যা ৪৬২। বড় পাঁচটি প্যানেল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে- ছাত্রশিবির, ছাত্রসংসদ, ছাত্রদল, উমামা ফাতেমার নেতৃত্বাধীন স্বতন্ত্র প্যানেল এবং শেখ তাসনিম আফরোজ এমি নেতৃত্বাধীন বামপন্থী প্যানেল।
এদিকে বৃহস্পতির (২৮ আগস্ট ) ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থীরা মধুর ক্যানটিনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি চিরতরে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকে মূলোৎপাটন করা হবে। ক্যানটিনে ফাও খাওয়া থেকে শুরু করে রাজনৈতিক যে অপসংস্কৃতিগুলো ছিল, সেসব অপসংস্কৃতি চিরতরে মূলোৎপাটন করা হবে। শিক্ষার্থীরা যেন মানসিক প্রশান্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন, সে জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিপূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও নজর থাকবে তাঁদের।
প্রচারণা ও নির্বাচন পরিবেশ
নির্বাচন আচরণবিধি অনুযায়ী প্রচারণা চালাতে হচ্ছে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। ক্যান্টিন, পোস্টার, লিফলেট ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে এবং কোনো ধরনের অনৈতিক উপহার প্রদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শেষের দিকে ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী, কেউ দলগতভাবে আবার কেউ স্বতন্ত্রভাবে। প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
ভোটের দিনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৮ কেন্দ্রে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হবে। প্রাক্টোরিয়াল বডি, পুলিশ ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করবে। নির্বাচনের দিনে ঢাবি মেট্রো স্টেশনও বন্ধ থাকবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বরাতে রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ বাহিনী নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করবে। ইতোমধ্যে টহল টিমসহ সংশ্লিষ্ট শাখাগুলো সক্রিয় আছে।
আদালতের স্থগিতাদেশ ও আপিল
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্ট ডাকসু নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত করে। তবে একই দিন বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন। ফলে ৯ সেপ্টেম্বরই ভোট অনুষ্ঠিত হবে বলে নিশ্চিত হয়।
এ সময় ছাত্রসমাজ নির্বাচনের সময়সূচি রক্ষার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে।
আপিল বিভাগে শুনানি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত করে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদনের ওপর আপিল বিভাগে শুনানির জন্য বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন প্রক্রিয়া ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন।
একই দিন বিকেলে এ বিষয়ে হাতে লেখা আবেদন নিয়ে চেম্বার জজের দ্বারস্থ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে ঢাবির সিভিল মিসলিনিয়াস পিটিশন (সিএমপি) (হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন) দাখিল করা পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেন চেম্বার আদালত।