জাকসু নির্বাচনেও মুখোমুখি শিবির-ছাত্রদল!

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯২ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী প্রতিবছর এ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও বিগত বছরগুলোতে তা হয়নি। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। 

শিক্ষার্থীরা মনে ধারণা করছেন নির্বাচনে মূল লড়াই হচ্ছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মধ্যে। 

ভোট গ্রহণ হবে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। ২১ টি হলে বা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। প্রস্তুত করা হয়েছে ভোট কেন্দ্রগুলো। এবারের নির্বাচনের মোট ভোটার ১১৭৪৩ জন। মোট প্যানেল হয়েছে আটটি। কেন্দ্রীয় সংসদের ১৭৯ প্রার্থীর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী অমর্ত্য রায়ের প্রার্থীতা বাতিল হয়েছে এবং নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া।

নির্বাচন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে নিয়মিত শিডিউলের বাইরে অতিরিক্ত কয়েকটি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে ক্যাম্পাসে। নির্বাচন উপলক্ষে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়ে প্রশাসন সতর্ক ও তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান।

জাকসু নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ওএমআর ব্যালট পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। ভেট গণনা করা হবে ওএমআর মেশিনে। ২১টি ভোটকেন্দ্রে বুথ থাকবে ২২৪টি। ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা, ৬৭জন পোলিং কর্মকর্তা ও ৬৭ জন সহকারী পোলিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন।

এ ছাড়া  বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ সদস্য মোতায়েন থাকবে। তারা নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করবেন।  এছাড়াও প্রয়োজনবোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীও থাকতে পারে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। কেন্দ্রের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণে প্রায় ৮০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। জাকসুর জন্য তিন পৃষ্ঠার এবং দুটি হলের জন্য দুই পৃষ্ঠার এবং বাকি হলগুলোর জন্য এক পাতার ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে।

নির্বাচন চলাকালীন কেন্দ্রগুলোতে প্রার্থীদের কোনো এজেন্ট থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়াও ওএমআর মেশিনে ভোট গণনায় স্বচ্ছতা নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। এছাড়াও নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা।

ছাত্র শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশ নিয়ে কিছু শঙ্কা রয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে পোলিং এজেন্ট না রাখার এবং ওএমআর মেশিনে ভোট গণনার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছি। আশা করি তারা বিষয়গুলো বিবেচনা করবেন।

নির্বাচনে ভোট কারচুপি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের জিএস প্রার্থী শরণ এহসান। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা আমরা এখনো পর্যন্ত দেখিনি। এজন্য আমরা মনে করি, নির্বাচনে ভোট কারচুপির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেননি গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল।  তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রাখতে চাই। শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছে। আশা করছি সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই শেষ হবে।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা নিরাপত্তা স্বার্থে ক্যাম্পাসের আশেপাশের মানুষদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব কতৃপক্ষ ও জাকসু নিয়ে কনসার্ন। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের চলাচলের বিঘ্নতা না ঘটিয়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখার কথাও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। আমরা তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো।

ডাকসুর পূনরাবৃত্তি জাকসুতে হবে কিনা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র  সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৯ সেপ্টেম্বর। ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের ভিপি, জিএস ও এজিএসসহ ২৮ পদের মধ্যে ২৩ পদেই জয়লাভ করেছে ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা।

বাকি ৫ টি পদে জয়লাভ করেছে স্বতন্ত্র প্রার্থী।  ডাকসুতে একটি প্যানেলের এমন নিরঙ্কুশ জয়ের পুনরাবৃত্তি কি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ( জাকসু) নির্বাচনে হতে পারে এবং ডাকসুতে ছাত্রশিবিরের নিরঙ্কুশ জয় জাকসুতে ছাত্রশিবিরকে এগিয়ে রাখতে প্রভাব ফেলবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

ডাকসুর মতো জাকসুতে কোনো প্যানেলই পূর্নাঙ্গভাবে জয়লাভ করতে পারবে না বলে মনে করেন বাগছাস ও বামপন্থী প্যানেলের প্রার্থীরা। তবে ডাকসুর মতো জাকসুতেও জয়ের আশাবাদী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী তৌহিদ সিয়াম গণমাধ্যমকে বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদেরকেই ভোট দেবে যারা ক্যাম্পাসের প্রাণ-প্রকৃতি ও সাংস্কৃতিক দিকগুলো আপহোল্ড ( ধারণ) করে।

বামপন্থী শিক্ষার্থীদের একটি অংশের সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শরণ এহসান বলেন, জাকসুতে কোনো প্যানেলই পূর্নাঙ্গ প্যানেল নিয়ে জিততে পারবে না। যদিনা ভোটে কারচুপি হয়।

ছাত্র শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাকেই ভোট দেবে যারা শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করবে। আমরা আশাবাদী শিক্ষার্থীরা আমাদেরকে ভোট দিয়ে তাদের স্বার্থে কাজ করার সুযোগ দেবে।